ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গঃ ঢাবি শিক্ষকদের মারামারি, কি বার্তা পেলাম আমরা


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৭, ১০:৩৩ এএম
প্রসঙ্গঃ ঢাবি শিক্ষকদের মারামারি, কি বার্তা পেলাম আমরা

গত ২ নভেম্বর (বৃহসপতিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে গেল একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে ব্যাপারটি আমার জন্যও লজ্জাজনক। আমার শ্রদ্ধেও শিক্ষকরা মারামারি করেছেন, হাতাহাতি করেছেন, ঘুষি মেরে একজন আরেকজনের নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। এক বা একাধিক শিক্ষকের আঘাতে রক্ত ঝরেছে আরেকজনের মুখে।

ঘটনা যতটুকু জানা গেছে তার সারমর্ম হচ্ছে ঢাবি নীল (আওয়ামী পন্থি) দলের একটি সভা ছিল টিএসসিতে। সেখানে সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জানের পক্ষের ও বিপক্ষের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এক পক্ষের বক্তৃতার সময় অন্য পক্ষ নানা মন্তব্য করছিল। এতে একপর্যায়ে একজন শিক্ষক (প্রক্টর) অন্য একজন অধ্যাপককে পাগল সম্ভোধন করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে স্টেজে যান এবং মারামারি, তথা হাতাহাতি ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। যেহেতু উনারা সবাই আমার সম্মানিত শিক্ষক তাই সঙ্গত কারনে তাদের নাম উল্লেখ করলামনা।

শিক্ষকদের এই মারামারি আমাদের আসলে কি বার্তা দিল? উপরের ঘটনাটা দেখলেই বুঝা যায় এখানে যারা নিজেদের আত্মমর্যাদা হারিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন তারা সবাই সিনিয়র শিক্ষক। কেউ প্রক্টর, কেউ অধ্যাপক, কেউ বা ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। আমার এই শ্রদ্ধেও শিক্ষকরা কেউই বয়সে তরুন বা সদ্য যোগদানকৃত নন। তারা যদি প্রকাশ্যে এভাবে মারামারিতে লিপ্ত হন তাহলে তা অন্য তরুন শিক্ষক বা এই বহৎ শিক্ষা পরিবারে কি সংকেত দিবে। যদি অন্যের মত পছন্দ না হলে মারামারি করে একজন আরেকজনের নাক ফাটিয়ে দেন তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা কি শিখবে। আপনারা সবাই তাদের কাছে আদর্শ, এখন তারা যদি আপনাদের এই ঘটনা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে কারো সাথে মতের বিরোধ হলে একজন আরেকজনের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়, রক্ত ঝড়ায়, আর বলে সম্মানিত শিক্ষকরা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন তাহলে আপনারা কি জবাব দিবেন।

নিজেদের মধ্যে মতের অমিল, দলাদলি থাকতে পারে। কিন্তু শিক্ষকদের মাঝে কোন্দল কখনোই কাম্য নয়। নীল, সাদা, গোলাপি এই বিভক্তি থাকতে পারে কিন্তু নীলকে যদি বিভাজন করে হালকা নীল, গাড়ো নীল, আকাশি, নেভী ব্লু করা হয় তবে এই হাজার হাজার সাদা মনের শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত যে ক্রমশ ধুসর থেকে ফিকে হয়ে বর্ণহীন হয়ে যাবে সেই বোধগম্য আপনাদের থাকা উচিত।

সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় গুলা যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, গবেষনা করছে, নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কার করছে, তারা সেরা থেকে আরো সেরা হচ্ছে, সেখানে আমাদের গড়বে যারা তারা একজন আরেকজনের নাক ফাটিয়ে দিচ্ছে। আর এই জন্য ভারত-পাকিস্তান পারলেও আমরা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত হয়েও পারছিনা সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান নিতে।

আমার মাননীয়, সম্মানিত, শ্রদ্ধেও শিক্ষকরা সারাজীবন জেনে এসেছি আপনারা আমাদের পিতৃতুল্য। আপনারা অত্যন্ত সম্মানীয় শিক্ষক, তাও আবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের। আপনারা যদি সন্তানদের সামনে নিজেদের মধ্যে এভাবে মারামারির দৃষ্টান্ত রেখে যান তাহলে আমরা কোন পথে যাব? নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ হলেই কি আরেকজনকে আঘাত করতে হবে? তাহলে আঘাত-প্রত্যাঘাতে এই গোটা শিক্ষা পরিবার শেষ হয়ে যাবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষক সুস্থ দেহে আমাদের পাঠদান করেন। আমরা চাইনা আমাদের আদর্শ শিক্ষক কেউ হোক নাক ফাটা বা আঘাতে জর্জরিত।

 

বোরহান উদ্দীন, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ