ভোলা: ভোলার চরফ্যাশনে রাতের মেঘনায় মা ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে। দিনে আড়ালে আবডালে আর রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে মেঘনায় মা ইলিশ শিকার করা হচ্ছ। যদিও এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কোনো লোকজনের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, ঘাটেঘাটে দালালদের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ শিকার হচ্ছে। এ কাজে আড়ালে থাকছেন মূলহোতারা। ফলে রাতের মেঘনায় মা ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে।
এ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে গত রোববার রাত ১১টার পর গোনিউজের এ প্রতিবেদক মেঘনার বেতুয়া, নতুন স্বুাইজঘাট, সেন্টারের ঘাট এবং ডাক্তারেরঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। মধ্যরাতে জাল ফেলার সময় হলে জেলেরা নৌকা নিয়ে মেঘনায় নেমে যায়। রাত ৩টার পর থেকে জেলেরা নৌকাভর্তি মা ইলিশ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে থাকে। কিন্তু এ প্রতিবেদকের অপ্রত্যাশিত উপস্থিতির টের পেয়ে জেলেরা ঘাট ছেড়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে থাকে।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবহিত করার জন্য চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম, কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এবং উপজেলা মৎস্যসম্পদক কর্মকর্তা পলাশ হালদারকে ফোন দেওয়া হলেও তারা কিন্তু কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি।
ফলে এ প্রতিবেদক ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিনকে বিষয়টি অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেঘনায় পর্যাপ্ত টহল দল মোতায়েন আছে বলে এ প্রতিবেদকে জানান। কিন্তু এমন কোনো দল মেঘনায় নেই বললে তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। কিন্তু রাত ৫টা পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে মেঘনায় আসপাশে দেখা যায়নি।
এরপর রাত সাড়ে ৪টার কিছু পর স্বুাইজঘাটে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার মাছ নিয়ে আসে। এ প্রতিবেদককে দেখে ট্রলার মালিক বাকের, মাঝি জামালসহ ৬ জেলে বলেন, ‘আমারা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ইলিশ মাছ ধরি। আমাদের আপনি কিছুই করতে পারবেন না বরং এখান থেকে ভালো চান তো চলে যান। তা না হলে এখান থেকে জীবিত যেতে পারবেন না।'
তবে ভোর ৫টার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে একজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং একজন আনসার সদস্য নতুন স্বুাইজঘাট পৌঁছে জেলেদের ফেলে যাওয়া ট্রলার, জাল এবং মাছ জব্দ করেন।
তালতলা ঘাটের জেলে আব্দুল মান্নন জানান, ঘাটের দালাল কুদ্দুস এবং ছায়েদ প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। এ জন্য জেলেদের কাছ থেকে প্রতিদিন রাতে দুইবার টাকা নিয়ে থাকেন। যেসব জেলেরা টাকা দিয়েছে প্রত্যেকদিন রাতে কেবল সেইসব জেলেরা মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে পারছে।
ডাক্তারেরঘাটের জেলে নুর হোসেন জানান, প্রতি রাতে মাঝিদের শিকার করা মাছের একটা অংশ কুদ্দুস দালাল এবং ছায়েদ কিনে নেন। ৫ হাজার টাকা পোন (১ পোন-৮০টি) দরে মাছ কিনেন তারা। পরে এই মাছ তারা (দালাল) সাড়ে ৭ হাজার টাকা পোন দরে বাছাইকৃত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। ক্রেতাদের একটা অংশ চরফ্যাশন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী। যারা এসব মাছ বাড়িতে বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা পলাশ হালদার জানান, রোববার রাতে মৎস্য বিভাগের একটি দল তেতুলিয়া নদীতে অভিযানে ছিল। মেঘনায় অভিযানের কথা ছিল কোস্টগার্ডের।
কিন্তু কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই রাতে মেঘনায় কোস্টগার্ডের অভিযান ছিল না। তিনি মিথ্যা বলেছেন। কারণ সেদিন রাতেতো কোস্টগার্ড তেতুলিয়া নদীর মানিকার ঠোডা এলাকায় অভিযানে ছিল।
গোনিউজ২৪/এমবি