ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুরুষের পোশাক পরলেই নারীবাদী হওয়া যায় না!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০১৭, ০৫:২৭ পিএম আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০১৭, ১১:৪৭ এএম
পুরুষের পোশাক পরলেই নারীবাদী হওয়া যায় না!

আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আদিম। আর আমরা হলাম আধুনিক। আদিম আর আধুনিকতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আজ পোশাক নিয়ে কথা বলবো। এ প্রসঙ্গের একটা শানে নুযুলও আছে। তার আগে অতীতের দিকে চোখে ফেরাতে চাই।

আদিম যুগে পোশাক ছিলো না বলে আমাদের পূর্ব পুরুষরা গাছের ছাল-বাকল দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতো। যদিও বাকি শরীর থাকতো নগ্ন। আর আমরা আধুনিক হওয়ার পর ধীরে ধীরে আদিমযুগেই চলে যাচ্ছি। এ যুগে হাজার রকম পোশাকের ভারে ভারাক্রান্ত আমরা। একেকজনের সংগ্রহে রয়েছে কত বিচিত্র যে পোশাক তার ইয়ত্তা নেই। 

অথচ এখন এই আধুনিক মানুষ আমরা সেই আদিম স্টাইলেই কোনোরকমে লজ্জাস্থান ঢেকে ঢুকে শরীরের সব অংশ বের করে রাখি। তাই এখন অনেকেরই প্রশ্ন- পোশাক উন্নত হওয়া বা পোশাকে বৈচিত্র আসায় কী লাভ হলো? শরীরে পোশাক থাকা আর না থাকার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য থাকছে না!

এটা আমরা স্বীকার করি যে, একজন মানুষের জনপ্রিয়তা আর তার সর্বজনগ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ আর পোশাক পরিচ্ছদের সমন্বয়ে। আর একজন মানুষের রুচিবোধ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় তার পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখেই।

মেয়ে আর ছেলেদের রয়েছে আলাদা আলাদা পোশাক। ছেলেদের কিছু কিছু পোশাক আছে যা সব ছেলেকে মানায় না। একইভাবে কিছু কিছু পোশাক আছে সব মেয়েদেরও মানায় না। অবশ্য এটা হয় খুবই বিশেষ ক্ষেত্রে।

বলতে কি, আজকাল কিছু মেয়ে আধুনিক হবার নামে ছেলেদের মতো প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি পরা শুরু করেছে। তাহলে তো প্রশ্ন উঠতে পারে, এতোদিন শুধু ছেলেদের পোশাকই আধুনিক ছিলো? তাহলে মেয়েদের পোশাক কি আধুনিক ছিল না? সব ছেলেই শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি পরে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আর মেয়েরা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পরে কি পিছিয়ে পড়ছি? এমন একটা কমপ্লেক্স কি কাজ করছে মেয়েদের মধ্যে?

জানি না, কে কেমন করে ভাবছেন এ বিষয় নিয়ে? তবে আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকেই বলতে চেষ্টা করছি। আমরা পর্দায় নাটক, সিনেমা দেখে দেখে নিজেকে গল্পের নায়িকা ভাবতে শুরু করি। বলা বাহুল্য, নাটক, সিনেমা একটা বিজনেস। বলা যায়, শিল্পসম্মতভাবে মানুষের স্বপ্ন আর অনুভূতি কেন্দ্রিক বিজনেস। 

পরিচালক যতো বেশি দর্শক টানতে পারবেন, ততো বেশি তার লাভ। সে কারণেই তিনি তার নাটক বা সিনেমাতে এমন কিছু উত্তেজনাকর পোশাক ব্যবহার করেন, যা দর্শকদের মধ্যে দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি করে। কখনও নিজেকে পর্দার নায়ক-নায়িকা ভেবে স্বপ্নের ফানুষ ওড়ান।

এ পরিপ্রেক্ষিত থেকে তাই আমি আবারো বলতে পারি, নাটক-সিনেমার দর্শককে টানা একটা বিজনেস টেকনিক। তবে আসল ব্যাপারটা আমাদের মধ্যেই। আমরা যখন পর্দার মেয়েটির মাঝে নিজের ছায়া দেখতে চাই তখন নিজেও সেই পোশাক বাস্তব জীবনে পরিধান করি। সব পোশাক যে আমাদের নিজের জন্য নয়, এ কথাটা হয়তো আমরা ভুলেই যাই। আমরা সামনে যাওয়ার নাম করে পোশাকিআধুনিক হয়ে উঠি। বিপরীত দিক থেকে আমাদের রুচির দিক দিয়ে নিচেই নামতে থাকি। মূলত, পোশাক আধুনিকতার মাপকাঠি হতে পারে না।

আবার বিপরীত দিকে, একটা মেয়ে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি পরলেই যে তাকে অশ্লীল বলতে হবে এমন কিন্তু নয়। যে যেমন পোশাকে স্বাচ্ছন্নবোধ করবে সে তেমন পোশাক পরবে। এটা নিয়ে সমালোচনার কিছু থাকতে পারে না।

তবে সামাজিক প্রাণি হিসেবেই মাথায় এটা রাখা প্রয়োজন যে, আমার পোশাক যেন অন্যের অস্বস্তির কারণ না হয়। এক্ষেত্রে কোনো মেয়ে যদি বলতে চান- আমার যেমন ইচ্ছে তেমন পোশাক পরবো। তবে অন্যের অস্বস্তি হবে কেন। আর হলেই আমার দায় কিসের?

এক্ষেত্রে অন্যের দৃষ্টান্ত নয়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পথে-ঘাটে, এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি কোনো কোনো মেয়েকে এমন অদ্ভুত সব পোশাক পরতে দেখেছি যে আমার নিজের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। একই অস্বস্তি তৈরি হতে দেখেছি আশেপাশের মানুষজনের মধ্যেও।

এবার আসি শানে নুযুলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নোটিশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সংবাদ মাধ্যমে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। কে বা কারা নোটিশটি দিয়েছেন তা বলতে পারছেন না দায়িত্বশীল কেউই। তবে নোটিশে ছাত্রীদের পোশাক পরা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে অনেক ছাত্রী ক্ষুব্ধও।

পরে হল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই নোটিশ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও করা হচ্ছে। তবে নোটিশে উল্লেখিত পোশাক নিয়ে যা বলতে চাওয়া হয়েছে, সেটা রুচিশীল পোশাককেই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। 

আমি আগেই বিস্তারিত বলেছি, আমার বাসায় আমি যেমন খুশি তেমন থাকতেই পারি। কেননা, আমার বাসায় কাউকে আমার রুচিবোধ সম্পর্কে জানানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু ব্যাপারটা প্রশ্নবোধক হয়ে যায় তখনই যখন বাইরের বা কর্মস্থলের প্রসঙ্গ আসে।

বাইরে বা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে যে পোশাক পরবো সেটাই আমার রুচিবোধের পরিচায়ক। আর আমার পোশাক থেকেই ধারনা পাওয়া যাবে আমার পারসোনালিটির। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা জেনে ও মনে রাখা শ্রেয় যে, পুরুষের পোশাক পরে আন্দোলন করলেই নারীবাদী হওয়া যায় না। 

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ