ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘পুরুষ নির্যাতন’র স্বীকার খায়রুলের আর্তনাদ


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০১৭, ১১:০৪ এএম
‘পুরুষ নির্যাতন’র স্বীকার খায়রুলের আর্তনাদ

সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও নারীরা পুরুষের তুলনায় কায়িক, মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল। তাই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও নির্যাতন রোধে করা হয়েছে নানা আইন। এছাড়া স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় প্রশাসন সবসময়ই নারী নির্যাতন সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতন মামলাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে পুরুষদের হয়রানি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এভাবে নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলায় হয়রানির শিকার হওয়া একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূইগড়ের শেখ খায়রুল আলম। একদিনের জন্যও ঘরে বউ তুলতে না পারলেও সেই বউয়ের করা মামলায় হাজতে থাকতে হয়েছে ৭৭ দিন। খায়রুল আলমের দাবি, কোন প্রকার দোষ না করেও থাকতে হয়েছে হাজতে। মামলার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে ২০১৪ সালের মামলা। প্রতি ২-৩ মাস পর পর দিতে হয় হাজিরা।

খায়রুল আলম জানান, ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর একই এলাকার মেয়ে রিমিকে(ছদ্ধনাম) এক লক্ষ টাকা মোহরানায় কাবিন করে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন খায়রুল। মেয়ের বাবার ইচ্ছায় বিয়ে হয় ঢাকার মানিকনগরে। কথা ছিলো মেয়ের বাবা দুইমাস পর মেয়েকে তুলে দিবেন। কিন্তু এরই মধ্যে খায়রুল জানতে পারে তার বউয়ের অন্যের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে খায়রুলের বিরুদ্ধে করা হয় যৌতুকের মামলা। তবে তদন্তে মামলার সত্যতা প্রমাণ পায়নি সিনিয়র সহকারী জজ হুমায়রা তাসনিম।

পরে তার বিরুদ্ধে করা হয় নারী নির্যাতন মামলা। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে গ্রেপ্তার হন তিনি। ৭৭ দিন পর তাকে জামিনে মুক্তি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্ট। তবে এখন পর্যন্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পাননি খায়রুল। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া চলতি মাসের নয় তারিখ ছিলো নারী নির্যাতন মামলার শুনানি।

খায়রুল আলম আক্ষেপ করে বলেন, 'মেয়েরা যা বলে আদালত তাই বিশ্বাস করে। বাদীপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ২০১৪ সালের মামলা এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে। তারা সাক্ষী হাজির করার জন্য শুধু সময় চায়, আর মেয়ে বলে আদালতও তাদের সময় দেয়।' ৭৭ দিন কারাবাস ও আজ পর্যন্ত মামলা ঝুলে থাকায় শেষ হয়ে গেছে খায়রুলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ আয়ের সকল উৎস। মামলার পিছনে দৌড়িয়ে শেষ করেছেন যৌবনও। তাই মানুষের যাতে জীবন যৌবন নষ্ট না হয় তাই সরকারের কাছে এ ধরনের মামলা দ্রুত শেষ করার দাবি জানান খায়রুল।

নারী নির্যাতন মামলা হলেই আসামিকে জেলে পাঠানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খায়রুল বলেন, ' নারী নির্যাতন মামলা হলেই আগে জেলে। আগে মামলার তদন্ত হোক, তারপর শাস্তি হোক। কিন্তু নারী নির্যাতন মামলা হলেই আগে হাজত, তারপর তদন্ত।"

হয়রানি বন্ধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভুমিকার কথা জানতে চাইলে খায়রুল জানান, বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যান কয়েকবার মেয়েপক্ষকে ডেকেছেন, কিন্তু তারা আসেনি। পরে খায়রুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় স্থানীয়দের কাছে ঘৃনীত মেয়ের পরিবার ঢাকায় চলে আসে। পূর্বে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ও বাসা পরিবর্তন করায় মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। শুধুমাত্র মামলার শুনানির সময়ে আদালতে আসে তারা।

৭৭ দিন কারাবাসের পর খায়রুল উপলব্ধি করেন দেশের বহু পুরুষ মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলার শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনুভব করেন সমন্বিতভাবে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। তাই আর কোন পুরুষকে যেন তার মতো হয়রানির শিকার হতে না হয় তাই "পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন" বাস্তবায়নের লক্ষে রাস্তায় নেমেছেন খায়রুল। নিজ বাসায় প্রধান কার্যালয় করে গঠন করেছেন "পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ (পুনিপ্রআবিডি)" নামের একটি সংগঠন। প্রথম দিকে একা আন্দোলন চালিয়ে আসলেও বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছেন আরো অনেক নির্যাতিত পুরুষ। ইতিমধ্যে ১৫টি জেলায় 'পুনিপ্রআবিডি'র কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকার নানা স্থানে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের জন্য মানববন্ধন করছেন খায়রুল আলম। যৌতুকের জন্য মারাত্নক জখম করলে যাবতজীবন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে ১৪ বছর কারাদন্ড, এ আইন সংশোধন এবং পুরুষ নির্যাতন দমন আইনের দাবীতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তার সংগঠন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি ‘যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৭' এর সংশোধনের জন্যও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়।

গত ১৫ মার্চ নির্যাতিত পুরুষদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন খায়রুল আলম। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের মাধ্যমে পুরুষদের হয়রানি বন্ধ ও পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনে সরকারের কাছে ২১ দফা দাবি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে:

১. নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীকে কঠিন শাস্তির আদেশসহ পর্যাপ্ত জরিমানার ব্যবস্থা করা।
২. বিনা অপরাধে জেল খাটালে বাদীকে ক্ষতিপূরণসহ শাস্তি দেয়া।
৩. স্ত্রীর মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা যাবে না।
৪. তদন্ত ছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবরকে আসামি করা যাবে না।
৫. স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে তদন্ত সাপেক্ষে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার ব্যবস্থা।
৬. সন্তান হওয়ার পর স্ত্রী স্বেচ্ছায় অন্যের কাছে চলে গেলে সন্তানকে স্বামীর হেফাজতে দেয়া।
৭. স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীকে তালাক দিলে সে ক্ষেত্রে স্বামীর কোনো দোষ না থাকলে স্ত্রী জরিমানাস্বরূপ স্বামীকে দেনমোহরের সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করবে।
৮. বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ত্যাগ করতে বাধ্য করলে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে স্বামীকে যাতে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে।
৯. স্বেচ্ছায় স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে গেলে কোনো খোরপোষ পাবে না।
১০. স্ত্রী নিজ পিত্রালয়ে অবস্থানকালীন কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে বা আত্মহত্যা করলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে স্বামীকে যাতে হয়রানি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা।
১১. মহিলা কর্তৃক পুরুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হলে ওই মহিলার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার ব্যবস্থা করা।
১২. তালাকের পর দেনমোহর ও খোরপোষের মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলা দিয়ে স্বামীকে যাতে হয়রানি করতে না পারে।
১৩. পুরুষ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি আইনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বিবেচনা না করা।

শেখ খায়রুল আলমই একমাত্র ব্যক্তি নয়, দেশে অগণিত পুরুষ নারী নির্যাতন মামলার হয়রানির শিকার। তাই পুরুষের প্রতি নির্যাতন বন্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। খায়রুলের ভাষায়, 'আমার আন্দোলন করার একটাই উদ্দেশ্য আমার জীবনে যা ঘটেছে আর কারো জীবনে যাতে এ রকম ঘটনা না ঘটে। সবার দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়। আমাদের ২১ দফা বাস্তবায়ন হলেই সবার দাম্পত্য জীবন সুখের হবে এবং আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী পাবো।'

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়