ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাপিষ্ঠদের দুনিয়া বানিশান্তা!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭, ১০:৪৯ এএম
পাপিষ্ঠদের দুনিয়া বানিশান্তা!

‘বানিশান্তা’ নাম শুনলেই কেমন বোধ হয়। ভদ্র সমাজে এটা যেন অন্ধকারের দেশ; ‘পাপিষ্ঠদের’ দুনিয়া। নাম শুনলেই কেউ কেউ বিব্রত বোধ করেন। প্রকাশ্যে কিছু বলতে চান না। তবে আড়ালে আবডালে অন্য কিছু বোঝেন, বোঝান। তাদের কাছে স্থানটি ঢাকনা দেয়া দুর্গন্ধ। কিন্তু যে মানুষগুলো সেই দুর্গন্ধ গায়ে মেখে এখানে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন তারা কারা? কী তাদের পরিচয়? তারা কি ভিনগ্রহ থেকে এসেছে?

সত্যিই, ভদ্র সমাজে ‘বানিশান্তা’ একটি ‘পাপিষ্ঠ’, অবিচ্ছিন্ন জায়গা। তারা মনে করেন, এখানে শুধু ‘পাপ’ কাজ হয়। আর যারা এখানে বসবাস করে তারা সবাই ‘পাপী’। কিন্ত কেউ কি জানে, এই ‘পাপী’ হওয়ার পেছনের গল্প? না, কিছুই জানে না তথাকথিত ভদ্র সমাজ। তারা জানতে চায়ও না। আবার এই ‘পাপী’ মানুষগুলো যখন ‘পাপ’মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে তখনও ভদ্র সমাজ তাদের সেই সুযোগ দেয় না। অথচ ওরাও মানুষ। তাদেরও আছে হাসি-কান্নার গল্প। আছে অজানা অনেক স্বপ্নের কথা।

বানিশান্তা: ওয়ার্ল্ড অব সিনারস

‘নিষিদ্ধ’ পল্লীর এসব মানুষের পেছনের গল্প, স্বপ্নের গল্প, হাসি-কান্নার গল্প, অন্ধকার জগতে প্রবেশের গল্প- সব-ই তুলে এনেছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশের তরুণ আলোকচিত্রী শাহাদাত হোসেন। তার সেসব চিত্র ‘বানিশান্তা: ওয়ার্ল্ড অব সিনারস’ শিরোনামে প্রদর্শন করা হচ্ছে ইংল্যান্ডের কোলচেস্টার শহরের মারকুড়ি থিয়েটারের দিগবে (Digby) গ্যালারিতে। ছবিতে ফুটে উঠেছে বানিশান্তানিবাসীদের আলো-আঁধারের জীবন। ছবিগুলো দেখতে দেখতেই আমাদের কানে আসে সেখানকার নারীদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।

আমরা জানি, বানিশান্তা বাংলাদেশের খুব ক্ষুদ্র একটি দ্বীপ। বাগেরহাটের মংলা সমুদ্র বন্দরের নদীর ওপাড়ে ক্রমাগত পানির হুমকির মুখে থাকা বসতি। এখানে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা মাত্র দেড়শর মতো। যাদের বেশিরভাগই নারী আর কিশোরী। তারা এই দ্বীপে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে। মূলত, ‘বানিশান্তা’ সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একটি যৌনপল্লী।

বানিশান্তা: ওয়ার্ল্ড অব সিনারস

প্রতিবেশী গ্রামগুলোর কাছে ‘বানিশান্তা'র পরিচয় যৌনপল্লী হিসেবে। এখানকার বেশিরভাগ যৌনকর্মী কিশোরী। যাদের অনেকেই হয়তো জানেই না, কি ভয়ঙ্কর পেশায় জড়িত তারা। নিজের পরিচয়ও তারা ঠিকমতো বলতে পারে না। তাদের কোনো জন্ম নিবন্ধনও হয় না। সে কারণে চাইলেও বাণিশান্তার কোনো কিশোরী বাইরে গিয়ে মুক্ত জীবনযাপন করতে পারে না। তাই হয়তো সেরকম কোনো স্বপ্নও দেখাও তারা ভুলে গেছে।

‘বানিশান্তা’তে কোনো কিশোরী ইচ্ছে করে আসে নি। তারা সবাই তাদের আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা ভণ্ডপ্রেমিক বা স্বামীর নিষ্ঠুরতার শিকার। কেউ প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাসা থেকে পালিয়েছে। আর সেই বিশ্বাসঘাতক প্রেমিক তাকে অন্ধকার জগতে ফেলে দিয়েছে। কেউ ছোট্ট একটা সুখের সংসার করবে বলে বিয়ের পিঁড়িতে স্বামীকে কবুল করেছে। কিন্তু সেই ‘স্বপ্নের’ স্বামী তাকে দুঃস্বপ্নের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। কেউ আবার অভাবের সুযোগ নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে এখানে বিক্রি করে দিয়েছে। বাকিরা তো হতভাগিদের ঘরেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছে।

মা যৌনকর্মীরা স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তানদের অসুস্থ পরিবেশে রাখবেন না। ভদ্রপল্লীতে রাখবেন, মানুষ করবেন। নিজেদের পোড়া কপাল যেনো নিজের ছেলে-মেয়েরা না পায়। সারাক্ষণ সেই ভাবনাতেই কাটিয়ে দেন। কিন্তু তারা নিজেরাই যেখানে নিরাপদ নন, সেখানে সন্তানদের নিরাপত্তা দেবেন কেমনে? অনেকের কপাল এতোই পোড়া হয় যে, নিজের শরীর বিক্রির টাকা নিজে নিতে পারে না। সে-ই ছিনিয়ে নেয়, যে তাকে এই অন্ধকারের পথে নিয়ে এসেছে। কি ভয়ঙ্কর বিচিত্র অন্ধকারের পৃথিবী!

ফটোগ্রাফার শাহাদাতের ‘বানিশান্তা’ এখন ইংল্যান্ডে!

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ