মোদির শাসনামলে কি পুরো ভারতের ইতিহাসটাই পাল্টে ফেলা হবে? ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে হারিয়ে যাবে মুঘলরা? বইয়ের পাতা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবেন আলাউদ্দিন খিলজি, রাজিয়া সুলতানা আর শেরশাহের মতো ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো? এসব প্রশ্নই উত্থাপন করতে শুরু করেছেন দেশটির ইতিহাসবিদরা।
শুধু ইতিহাসবিদ নয়; নানাজনের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন। এর কারণও আছে। ইতোমধ্যে সম্রাট আকবরের সময়ে সংঘটিত হলদিঘাট যুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে ফেলেছে ভারতের রাজস্থান সরকার। দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত এই রাজ্যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে, ‘হলদিঘাটে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহ। আর পরাজিত হয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর।’ এবার সেখাকার স্কুলের ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার।
উল্লেখ্য, ১৫৫৬ সাল থেকে ১৬০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৯ বছর ভারতের সম্রাট ছিলেন আকবর। এই সময়ে মুঘল সাম্রাজ্য উত্তরে কাবুল ও কাশ্মীর থেকে পূর্বে বাংলাদেশ ও দক্ষিণে গোদাবরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। তার সময়ে রাজপুতদের হাতে রেখে রাষ্ট্র শাসন করতে চেয়েছিলেন আকবর। কিন্তু তাতে বাধা দেন মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহ। ১৫৭৬ সালে হলদিঘাটের মাঠে আকবরের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয় এবং প্রতাপের ক্ষুদে বাহিনী হেরে যায়।
সম্প্রতি রাজ্যের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যবই সংশোধন করেছে তারা। সংশোধিত পাঠ্যবইয়ে মুঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে কার্যত কোনো তথ্যই নেই। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ভারত শাসন করা এই রাজবংশটির ইতিহাস লেখার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কেবল তিনটি লাইন। মুঘল সাম্রাজ্যের বদলের ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে ঢোকানো হয়েছে মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে- সম্রাট আকবর নাকি ভারতবর্ষে একটি কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। অথচ আগে আকবরকে উদার ও সহনশীল শাসক বলেই উল্লেখ করা হতো ইতিহাসের পাঠ্যবইগুলোতে। অন্যদিকে ইতিহাসের পাতায় ‘জনগণের রাজা’ থেকে আদর্শ শাসক হয়ে উঠেছেন ‘ছত্রপতি শিবাজি’। তবে শুধু মুঘলরাই নন, তারও আগে আলাউদ্দিন খিলজি, রাজিয়া সুলতানা বা শেরশাহের মতো যেসব মুসলিম শাসকরা ভারতে রাজত্ব করেছিলেন তারাও পড়েছেন রোষে।
এদিকে মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন ভারতীয় ইতিহাসবিদরা। দেশটির প্রখ্যাত ইতিহাস গবেষক কিশোর দারাক বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা চেষ্টা করছে মহারাষ্ট্র সরকার। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে মুসলিম শাসকদের ইতিহাস বিকৃত করতে চাইছে।
অন্যদিকে রাজ্যের স্টেট ব্যুরো অব টেক্সবুক প্রোডাকশন অ্যান্ড ক্যারিকুলাম রিসার্চের ইতিহাস বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান সদানন্দ মোর সাফাই গাইলেন এর পক্ষে। তার মত, মহারাষ্ট্রকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই স্কুলপাঠ্য ইতিহাস বই সংশোধন করা হয়েছে। দিল্লিতে সুলতানি শাসনের ইতিহাসই হোক কিংবা মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস, সবক্ষেত্রেই প্রধান্য পেয়েছে মহারাষ্ট্র।
গো নিউজ২৪/ আরএস