শেরপুর: একটি হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেন ফরিদ মিয়া। তিনি সংসারের চাকা ঘুরাতে সারাদিন বাবা-মায়ের সাথে কাজ করেনে। তৈরি করেন হাত পাখা। হাত পাখা বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। সেই ফরিদই আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৯তম হয়েছেন।
অদম্য ইচ্ছা আর দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থার (ডপস) সহায়তায় সাফল্য অর্জনকারী এই ফরিদুল ইসলাম শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোপালখিলা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে।
ফরিদ মিয়ার বাবা একজন শ্রমিক। তার মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী। জমির পরিমাণ শুধুমাত্র বসতভিটা। তারা পাঁচ ভাই বোন। শিশু বয়স থেকেই সংসারের ঘানি টানতে মা বাবার সাথে কাজ করতে হয়েছে ফরিদকে। তৈরি করতে হয়েছে হাত পাখা। এরই ফাঁকে গোপাল খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করত ফরিদ মিয়া।
এক পর্যায়ে সংসারের টানাপোড়েনের কারণে তাকে নবম শ্রেণিতেই ছাড়তে হয়েছে পড়ালেখা। এমন এক সময় তার পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা (ডপস)।
ডপসের সহায়তায় ফরিদ আবার স্কুলমুখী হয়। বই, খাতা, কলমসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়ে তাকে সহায়তা দেওয়া হয়। শুরু হয় ফরিদ মিয়ার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলা।
কথা হয় স্বপ্ন বিজয়ী এ যুবক ফরিদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘ডপসের প্রতিষ্ঠাতা শাহীন মিয়া ভাইয়ের উৎসাহ উদ্দীপনা, সহায়তা আর দিক নির্দেশনায় আমি এতদূর আসতে পেরেছি। আমার বড় বোন লাকী আক্তার শেরপুর সরকারি কলেজে ইংলিশে অনার্সে (২য় বর্ষ) আর ছোট দুই ভাইবোন শ্রীবরদীর গোপাল খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়া লেখা করছে। সবার ছোট ভাই এবার পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা প্রত্যেকে বাবা মাকে হাত পাখা বানানোর কাজে সহায়তা করে। অল্প এ আয়ে ভাই বোনদের পড়া লেখার খরচ চালাতে তার মা বাবাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ফরিদ মিয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং আরও পড়া লেখা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এ টাকা জোগাড় করা তার বাবার পক্ষে কষ্টকর। এর পরেও তিনি হাল ছাড়েনি। তার প্রত্যাশা বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশ জাতির সেবা করবেন।
ডপসের প্রতিষ্ঠাতা শাহীন মিয়া বিএসপি জানান, ডপস মনে করে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। দেশে নানা কারণে অনেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ে। ডপস অনুসন্ধান চালিয়ে এসব ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চ শিক্ষা লাভ করে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
ফরিদের সাথে যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার- ০১৯০৪৯৯১৭৫৫।
গোনিউজ/এমবি