ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন খেলোয়াড়ের বিষাদময় ঈদ!


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৭, ১০:০৮ এএম
তিন খেলোয়াড়ের বিষাদময় ঈদ!

সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনের রং কেড়ে নিয়েছে ফুটবলার তানভীর চৌধুরীর। বিনা চিকিৎসায় এই ফুটবলার ধুঁকছেন নাটোরের অজপাড়াগাঁয়ে। ফুটবলার তৈরির কারিগর ওয়াজেদ গাজীর খোঁজ রাখে না কেউ। জীবন সায়াহ্নে এসে পাননি কোনো স্বীকৃতি। এখন পাচ্ছেন না তিনবেলা ভালো-মন্দ খাবার। অসুখে জোটে না ওষুধ। পাতানো ম্যাচে বলিরপাঁঠা বানিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল গোলকিপার ইরান শেখকে। নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হলেও খেলায় ডাক পান না। ঈদের আনন্দ সবার ঘরে থাকলেও তাদের ঘরে বিষাদের ছায়া। স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তানভীর-ইরানদের।

ব্রেন স্ট্রোক করায় সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়কে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদের তৎপরতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেক সুহৃদ ব্যক্তিত্বরা। কিন্তু তানভীর, ওয়াজেদ গাজীদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই।

স্মৃতিশক্তি অনেকটাই লোপ পেয়েছে ওয়াজেদ গাজীর। প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। অভাব তার আজ নিত্যসঙ্গী। ওষুধ কেনার পয়সাও তার নেই। বছর দেড়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আরামবাগ ক্লাবে পড়েছিলেন। ক্লাব থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় যশোরে।

দুই ছেলে থাকলেও তাদের কাছে জায়গা হয়নি ওয়াজেদ গাজীর। যশোর শহরের ওয়াপদাপাড়ায় মেয়ে শাহানা ইয়াসমিনের বাসাতেই আশ্রয় হয়েছে বাংলাদেশে অসংখ্য ফুটবলার তৈরির কারিগর গাজীর। যশোরের দুই ক্রীড়া সংগঠক শফিকুজ্জামান ও আকতারুজ্জামান ছাড়া তার দুঃসময়ে ফুটবল অঙ্গনের কেউ খোঁজখবরও রাখেন না। ২০১৫ সালে স্ত্রীকে হারিয়ে এমনিতেই মুষড়ে পড়েছিলেন।

তারও আগে নিজের অসুস্থতাকালীন সময়ে পণ্ডিত পুকুরের হালদা রোডের বাড়িটি বিক্রি করতে হয়। কপর্দকশূন্য ওয়াজেদ গাজীর খোঁজ নেয়ার আজ আর কেউ নেই। ফুটবলার, কোচ ওয়াজেদ গাজী খেলার মাঠকে ভালোবেসে সারা জীবন ক্লাব পাড়াতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। 

২০১২ সালের শুরুতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে দিন পনেরো পর আবার মাঠে ঠিকই ফিরে এসেছিলেন। ৮৬ বছর পার করেও ওয়াজেদ গাজী স্বপ্ন দেখেন মাঠে ফেরার। মাঠেই যেন তার মৃত্যু হয়- সেই কামনা করেন। 

১৯৫৮ সালে স্পোর্টিং ইউনিয়নের হয়ে কলকাতা লীগে অভিষেক হয় ছোট্ট এক কিশোরের। কলকাতা স্পোর্টিং ইউনিয়ন, কলকাতা মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ইপিআইডিসি (পরে বিজেএমসি), ঢাকা মোহামেডানে খেলেছিলেন এই অশিতপর। ১৯৭৮ সালে কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত মাঠেই ছিলেন ওয়াজেদ গাজী।

বাফুফের বড় কর্তা যখন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন, তখন দু’বেলা খাবার জোটে না জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার তানভীরের। দু’বছর কেটে গেছে। কিন্তু আজও নিভৃতেই দিন কাটছে অসুস্থ তানভীর চৌধুরীর। 

শোয়া থেকে উঠে বসতে পারেন না। দু’কদম হাঁটতেও পারেন না। একটি ঘরে শুয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে মাঠের এই যোদ্ধাকে। কেউ তার খবর রাখে না। দু’সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে আজ জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ এই ফুটবলার।

ঠিক দু’বছর আগে ২০১৫ সালের ১৯ মে বনপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তানভীর চৌধুরীকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই চলে গিয়েছিলেন নাটোরের সাবেক এই ফুটবলার। অবচেতন অবস্থায় প্রায় দেড় সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন তানভীর। দেশের জন্য ফুটবল খেলেছেন। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। 

তারপরও চরম আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তানভীর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। খেলা ছাড়ার পর উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসংস্থান ছিল না এই সাবেক ফুটবলারের। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে দিয়েছিলেন তারই সতীর্থ ফুটবলার এবং বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

আর্থিক অনটনের মধ্যেই দিন কাটছে তানভীরের পরিবারের। সেখানে ঈদের দিনে পায়েস সেমাই তো স্বপ্নের মতো। দুই মেয়ে তাবিতা চৌধুরীর ও তানবিতা চৌধুরীর ভাগ্যে জোটেনি নতুন জামা।

বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তানভীরের স্ত্রী মিলি আফরোজ আলো বলেন, ‘ঘাতক ট্রাক আমাদের সুখ-শান্তি সব কেড়ে নিয়েছে। দু’বছর ধরে আমার স্বামীর সঙ্গী হুইল চেয়ার। ঢাকায় নিয়ে যেতে অনেক খরচ। তাই নাটোরে আমার বাবার বাড়িতে থাকছি। উনি কোনো রকমে আমাদের সংসার চালাচ্ছেন। তানভীরের উন্নত চিকিৎসা দরকার। যেখানে আমাদের খাবারই জোটে না, সেখানে চিকিৎসা তো বিলাসিতা মাত্র।’

খুলনার রূপসায় দারিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত ইরান শেখের পরিবার। মুঠোফোনে আবেগঘন কণ্ঠে গোলকিপার ইরান শেখ বলেন, ‘জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মূল্যবান সময় আজ আমি নামে মাত্র ফুটবলার। শেষ হয়ে গেল আমার ফুটবল জীবন। ঈদের আনন্দ সবার ঘরে থাকলেও আমার ঘরে বিষাদের ছায়া। স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে আমার।’

২০১০-১১ ফুটবল মৌসুমে শেখ জামাল ও রহমতগঞ্জের মধ্যকার পাতানো ম্যাচের বলি হয়েছিলেন ইরান শেখ। পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত শেখ জামাল ও রহমতগঞ্জের কর্মকর্তাদের শাস্তি হয়নি। পয়েন্ট না কেটে শুধু আর্থিক জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছিল বাফুফে। কিন্তু অপরাধ না করেও রহমতগঞ্জের ফুটবল কর্মকর্তা প্রায়ত সালাউদ্দিন কালাকে পাঁচ বছর ও ইরান শেখকে দু’বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাফুফে।

অপরাধ না করেও শাস্তির খক্ষ থাকায় ইরান শেখের জীবনে নেমে এসেছিল ভয়াবহ বিপর্যয়। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েন এই ফুটবলার। আয় ছিল না। উনুনে হাঁড়ি চড়েনি। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কেটেছে তার পরিবারের। সালাউদ্দিন কালার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাফুফে তাকে ক্ষমা করলেও মাফ পাননি ইরান শেখ। 

কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে মাথা ঠুকেছেন। ধরনা দিয়েছেন একেক জনের কাছে। তাতেও মন গলেনি বাফুফের তথাকথিত বড় মাপের কর্মকর্তাদের। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে খুলনা আবাহনীতে খেলেছিলেন ইরান শেখ। কিন্তু স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ভেঙে ফেলায় খেলা বন্ধ। ইরান শেখদেরকেও কেউ আর ডাকে না। দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ইরান শেখকে ঢাকার ক্লাবগুলো নেয় না। ক্লাব কর্মকর্তাদের ভয়, ইরান শেখ যদি আবার পাতানো ম্যাচের তথ্য ফাঁস করে দেন। সেই পাতানো ম্যাচকে এখনও দুঃস্বপ্ন মনে হয় এই গোলকিপারের।

তার কথা, ‘বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী তখন আমাকে অভয় দিয়েছিলেন, তোমার কোনো ভয় নেই। কি ঘটনা ঘটেছে সব খুলে বল। রহমতগঞ্জ তোমাকে দলে না রাখলেও আমি তোমায় চাকরি দেব। তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না। উনার কথায় আমি যা জানতাম সব বলে দিয়েছি। সালাম ভাই চাকরি দেয়া দূরে থাক, আমার কোনো খোঁজখবরও রাখেননি। সালাম ভাইয়ের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তিনি দেই দিচ্ছি করে ফোন রেখে দিতেন।’ তার কথা, ‘ঢাকার মাঠে অহরহ পাতানো ম্যাচ হচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাফুফে। অথচ বলিরপাঁঠা বানিয়ে আমার পেটে লাথি দেয়া হয়েছে।’যু.


গো নিউজ২৪/এএইচ

সংবাদপত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর
ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

ব্যাংকে জমানো আমানত কমে যাচ্ছে

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

কারা হবে বিরোধী দল, লাঙ্গল না স্বতন্ত্র?

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিভিন্ন ছাড়ে ব্যাংক খাতের আসল চিত্র আড়ালের সুযোগ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

পাসপোর্ট এনআইডিসহ ১৯ কাজের অতি প্রয়োজনীয় জন্মসনদ এখন ‘সোনার হরিণ’

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যে ব্যাংক

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে

প্রশাসনের শীর্ষ পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে