ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গণধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়ার তরুণীর পোস্টে কমেন্টের ঢল


গো নিউজ২৪ | ওমেন’স কর্নার ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০১৭, ০৮:৫৬ পিএম আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭, ০৮:৪০ এএম
গণধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়ার তরুণীর পোস্টে কমেন্টের ঢল

ঢাকা: রাজধানীর বনানীতে গণধর্ষণের মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তানজিম নাইমা নামের এক সাহসী তরুণী। ঠিক সময়ে পুলিশ না এলে তাকে হয়তো খাবলে খেতো একদল নোংরা লোক। সেই ভয়াবহ বিপদে পড়া ও সেখান থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা নিয়ে তানজিম তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। 

আলোড়ন তোলা সেই পোস্টটি পড়ে অনেকেই অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সেই প্রতিক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আবারো পোস্ট দিয়েছেন তানজিম। গোনিউজের পাঠকদের জন্য সেই পোস্টটিও তুলে ধরা হলো-

‘পরশু সন্ধ্যায় আমার দেয়া পোস্টের বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া পেলাম। কেউ সাথে সাথে কল করেছে ও মেসেজ দিয়েছে। কেউ ইনবক্সে অনেক প্রশংসা ও অভিনন্দন দিয়েছে। কেউ পোস্টটা শেয়ার করে আমার সাহসিকতার প্রশংসা করেছে। কেউ আবার এতবড় রিস্ক নেয়ার জন্য আমাকে অনেক বোকা বলেছে। কেউ এটেনশনসিকার, ফেমসিকার, সেলেব্রিটি হওয়ার স্ট্র্যাটেজি বলেছে। কেউ বলেছে ঘটনাটা অতিরঞ্জিত অথবা পুরোটাই বানোয়াট।

কেউ আবার আমার পোস্টের ভাষা নিয়ে সমালোচনা করেছে। কেউ কেউ আমার ছবিতে এসে গালাগাল করে গেছে। সবশেষে একদল আমাকে বলেছে সব তো শেষ হয়েই গেছে, আমিও বেঁচে আছি, তাহলে এতো বড় পোস্ট কেন লিখতে গেলাম? আর লিখে যখন ফেলেছিই তাহলে এখনো কেন মুছে ফেলছি না? আমার কি লোকলজ্জার ভয় নাই? আমাকে এখন কে বিয়ে করবে? আমার কি জানের মায়া নাই? আমাকে ওরা যদি আবার অ্যাটাক করে?

কোনোটাই অস্বাভাবিক না। এরকমটাই হবে আমি জানতাম। জেনে বুঝেই পোস্টটা দিয়েছি। এবার সব ধরনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমার মনোভাব জানাচ্ছি।

যারা কল, মেসেজ দিয়ে আমি কেমন আছি জানতে চেয়েছেন, তারা আমার আপনজন। তাদের আমার এখানে কিছু বলার নাই। যারা ইনবক্সে স্যালুট বা প্রশংসা জানিয়েছেন, আমার পোস্টটা শেয়ার করেছেন তাদের ধন্যবাদ আমি কেন এতবড় রিস্ক নিতে গেলাম তা বুঝতে পারার জন্য। যারা বোকা বলছেন, তাদেরও ধন্যবাদ আমার বিপদটা বুঝে আমাকে বকা দেয়ার জন্য। কিন্তু একবার অনুরোধ করবো, আমার মতন কলিজাভর্তি সাহস আর আত্মসম্মান নিয়ে, আমার জায়গায় গিয়ে আমাকে জাজ কইরেন বা কী করা উচিত ছিলো সেই বুদ্ধি দিতে আইসেন।

যারা আমার ওই পোস্ট দেয়াকে এটেনশনসিকার, সুপারওম্যান- সেলেব্রিটি হওয়ার স্ট্যাটেজি বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা প্রশ্ন, ফেসবুকে সেলেব্রিটি সেজে, ফলোয়ার বাড়ায়ে আসলে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়? আমাকে একটু বুঝায়ে বলবেন? আমার ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়বে? আমার ভালো চাকরি হবে ফেসবুকের রেফারেন্সে?? তাহলে এই তথাকথিত হিরো সেজে আমার কী লাভ?

যারা বলছে ঘটনা অতিরঞ্জিত বা পুরোটাই বানোয়াট, তাদের উদ্দেশ্যে আসলে আমার কিছু বলার নাই। বরং আমি তাদের পৃথিবী সম্পর্কে এতো আশাবাদ দেখে খুবই আনন্দিত। উনারা খুব সুখী জীবনযাপন করেন। দুনিয়ার নৃশংসতা সম্পর্কে উনারা এখনো অজ্ঞাত। আমার উনাদের প্রতি কিছুটা হিংসাও হচ্ছে। আমিও যদি উনাদের মতন উটপাখি হয়ে গর্তে মাথা ঢুকায়ে ভাবতে পারতাম যে, আসলে পৃথিবীটা এরকমই নিরাপদ, তাহলে আমারও খুব শান্তির ঘুম হতো। শুধু উনাদের একবার অনুরোধ করবো, আমার এক সাইডে ফুলে যাওয়া মাথা আর শরীরের দাগগুলা একবার এসে দেখে যেতে।

পোস্টের ভাষা নিয়ে যারা সমালোচনা করেছেন, তাদের আমিও সমর্থন করি। কিন্তু আমার সঙ্গে যা ঘটেছে আমি এক্স্যাক্টলি তাই লিখেছি। একজন আমার পাছায় হাত দিলে সেটা পাছায় হাত দেয়াই হয়। নিতম্বে হাত দিয়েছে এটা মধুসূদনের কবিতাতেই মানায়। গায়ে হাত দিয়েছে বললে হাতের তর্জনী স্পর্শ করাও বোঝায়। Better, call a spade a spade. তারপরেও দুঃখিত, কারণ অনেক স্কুলপড়ুয়ারাও ফেসবুক ব্যবহার করে (যদিও করার কথা না)।

যারা আমার ছবিতে এসে আমাকে আজে বাজে গালাগালি করে গেছেন, আমার মতন বোন তাদের থাকলে গলা কেটে টুকরা টুকরা করে নদীতে ভাসায়ে দিতেন-- এইসব বলেছেন তাদের আমি বিশাল ধন্যবাদ জানাই। তারা বরং আমার উপকারই করেছেন। ঘটনাটা নিয়ে কারোও মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহও যদি থাকতো তাহলে তারা সেটা তাদের কমেন্টের মাধ্যমেই প্রকাশ করে দিয়েছে যে, আসলে এই সমাজ মেয়েদের কীভাবে ট্রিট করে। এই সমাজে criminal turns into victim and actual victim turns into villain. :) ধন্যবাদ।

এবার সর্বশেষ দলভুক্তদের প্রতিক্রিয়ার জবাব দিবো। আমি কেন এতো বড় পোস্ট দিলাম, আমি কেন পোস্টটা সরায়ে ফেলছি না, আমার লোকলজ্জার ভয় আছে কি না, আমাকে কেউ বিয়ে করবে কি না, আমার জানের মায়া আছে কিনা... ইত্যাদি ইত্যাদি।

ইভটিজিং বাংলাদেশে নতুন ঘটনা না। অহরহ হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করে। কেউ না শোনার ভান করে চলে আসে। কেউ আমার মতন বাড়াবাড়ি করে ফেলে। যারা প্রতিবাদ করে, তাদের ধন্যবাদ। যারা বাড়াবাড়ি করে তিনবার pepper spray করে, তাদের হাই-ফাইভ দিলাম। আর যারা কিচ্ছু না করে সোকলড ভদ্রঘরের মেয়ে সেজে মাথা নিচু করে চলে আসে, তাদের নিন্দা জানাই। 

আপনাদের জন্যই আজকে এই ইভটিজারগুলা এত সাহস পাইছে। আপনারাই তাদের ভাবতে শিখাইছেন যে মেয়েরা পাবলিক প্রপার্টি। আপনারা রাস্তায় ইভটিজারের পিছনে দৌড়াইতে না পারেন, pepper spray করতে না পারেন, শার্টের কলার ধরে দুটা চড় না দিতে পারেন, কিন্তু অন্তত ‘এই লোকটা আমার গায়ে হায়ে দিছে’ বলে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার তো করতে পারেন? না কি তাতেও আপনাদের গায়ে কলঙ্ক লেগে যায়?

আমার ওই পোস্টটা দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো সবাইকে জানানো যে, আমি প্রতিবাদ করছি। আর এ পোস্টটা আমি জীবনেও সরাবো না। এতে আমার যদি ক্ষতি হয় হোক। জান চলে যায় যাক। এমনিতেও এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে দুষিত বাতাস আমার পবিত্র ফুসফুসে নেয়ার চেয়ে মাটির নিচে যাওয়া অনেক ভালো। আমার বিয়ে হবে না? না হলে তো আরো ভালো। বিয়ে না হলে বাচ্চাও হবে না। আর এই বিষাক্ত পৃথিবীতে একটা নিষ্পাপ প্রাণ এনে তাকে নরক দেখাতে চাই না। এই পৃথিবীতে শুধু ৮০০ কোটি অক্সিজেন-ওয়েস্টিং- পোকামাকড়ই আছে, যারা দেখতে অবিকল মানুষের মতন। আর দরকার নাই।

আমি শুধু চাই, আমার কলিজার টুকরা ভাগ্নিগুলা, আমার আদরের ছোট-ছোট মামাতো-খালাতো-চাচাতো-ফুফাতো বোনগুলা, আমার ফুলের মতন ছাত্রীগুলার গায়ে যেন কোনো মানুষরূপী নরকের কীট হাত না দেয়া। চোখ দেয়ার কথা চিন্তাও না করে।

গোনিউজ২৪/এন

ওমেন`স কর্নার বিভাগের আরো খবর
আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!