ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাবারের অভাবে যৌনতা বিক্রিতে বাধ্য হয় মার্কিন কিশোরীরা


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০১৭, ০২:০৯ পিএম আপডেট: জুলাই ১৯, ২০১৭, ০৮:৩০ এএম
খাবারের অভাবে যৌনতা বিক্রিতে বাধ্য হয় মার্কিন কিশোরীরা

আমাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র মানেই বিশ্বের সবচেয়ে আর উন্নত একটি দেশ। কোনও অভাব নেই, অনটন নেই। চাইলেই সেখানে বিলাসিতা করা যায়। কিন্তু এই ধনী দেশটিরও আছে ঠিক এর উল্টো চিত্র। বাস্তবের যুক্তরাষ্ট্র আসলে আমাদের কল্পনার আমেরিকা নয়। ওই দেশেও আছে দারিদ্র্য। আর সেই দারিদ্র্যের কারণে দেহ বিক্রি করতে বাধ্য হয় দেশটির কিশোরীরা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের ক্ষুধা মেটাতে যৌনতা বিক্রিতে বাধ্য হয় তারা।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন কিশোররা খাবারের জন্য চুরি করা বা মাদক বিক্রির মতো সব কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আরবান ইনস্টিটিউট পরিচালনা করেছে এই গবেষণা। এতে বলা হয়, দরিদ্রদের সংখ্যা বেশি- এমন ১০টি আলাদা স্থানে পরিচালনা করা হয় গবেষণাটি। এতে অংশ নেয় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীরা। আর তাতেই উঠে এসেছে তাদের চুরি বা অন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে মাদক বিক্রি এবং কিশোরীদের শরীর বিক্রি করে খাবার সংগ্রহ করার মতো ভয়াবহ তথ্য।

গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির তথ্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, দেশটিতে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৬৮ লাখ কিশোর-কিশোরী পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ লাখ ভুগছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য ফুডব্যাংকের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই সেই সুযোগ নিতে পারেন না। ফলে বিকল্প পথে যেতে হয় তাদের। গবেষণার আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের প্রতি মাসের শেষের দিকে এসে খাবার কেনার কোনও টাকা থাকে না। হতদরিদ্র দেশগুলোতে যে চিত্র নিত্যকার, সেই চিত্রই বিরাজ করে এসব পরিবারে।

শিশু-কিশোররা স্কুলের জন্য দেয়া টিফিন বাঁচিয়ে রাখে। কারণ তারা জানে, তাদের জন্য রাতে কোনও খাবার থাকবে না। ওই বাঁচিয়ে রাখা টিফিন খেয়ে অর্ধভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায় তারা। অনেকেই রাতের খাবারের সময় হলে একটু সচ্ছল পরিবারের বন্ধুদের বাসায় চলে যায়, যাতে সেখান থেকেই রাতের খাবার সেরে ফেলা যায়। বয়সে একটু বড়রা না খেয়ে থাকে, যাতে তার ছোট ভাই বা বোন রাতে কিছু হলেও খেতে পায়। খাবারের এই অনিশ্চয়তা কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে যাচ্ছে ভিন্নপথে। এ থেকে উত্তরণের জন্য অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা কাজ না পেয়ে দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে অনেক স্থানেই।

নর্থ ক্যারোলাইনার এক কিশোরীর ভাষায়, ‘এটা এক ধরনের বিনিময় প্রথা। এর শর্ত- তোমার সঙ্গে বিছানায় যেতে রাজি আছি। কিন্তু রাতের খাবার খাওয়াতে হবে। এভাবেই মেয়েরা লড়াই করছে। এটা সরাসরি টাকার বিনিময়ে বিছানায় যাওয়ার চেয়ে ভালো। কারণ টাকা নিলে তাদের পতিতা বলা হবে। তাই তারা খাবারের বিনিময়ে শরীর বিলিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।’

প্রতিটি স্থানেই খাবারের কারণে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার উদাহরণ পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রে। অরেগনের পোর্টল্যান্ডের একজন কিশোরীর বক্তব্য, ‘এটা নিজেকে বিক্রি করার মতোই। টাকা বা খাবারের জন্য যেন আপনি প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু করতেই রাজি।’ পোর্টল্যান্ডের আরেকজনের কথা, ‘এটা প্রকৃতপক্ষে ডেটিং নয়। এটা অনেকটা এমন- আমি তাকে পছন্দই করি না। কিন্তু আমাকে তার সঙ্গে এটা করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।’

গবেষণার ১০টি স্থানের ৭টিতেই কিশোরীদের শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা অপরিচিত কারও সঙ্গে শরীর বিনিময় করতে বাধ্য হয়, কোনও পরিত্যক্ত বাসায় বা কোনও অফিসে বা রাস্তায় টাকায় বিনিময়ে দেহ দিতে বাধ্য হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার এক কিশোরী বলে, ‘আমি একজনকে চিনি, যে পরিবারের জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে স্কুলের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। সে পরিবারকে সহায়তা করতে চেয়েছিল। নিজেকে বিক্রি করতে শুরু করে সে।’

শিকাগো শহরের আরেক কিশোরী গবেষকদের জানায় ১১ বছর বয়সী অপর এক কিশোরীর কথা। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্কুল ছেড়ে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসের ছেলেরাও জানায়, সেখানকার স্কুলের মাঝারি ক্লাসের মেয়েরা পাবলিক প্লেসগুলোতেই নিজেদের বিক্রি করার প্রচারও করতে বাধ্য হয়।

মেয়েদের পাশাপাশি কিশোর বয়সী ছেলেরাও খাবার জোগাড় করতে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। নিজেদের বা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য ছেলে ও মেয়েরা স্থানীয় দোকানগুলো থেকে খাবারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চুরি করে থাকে বলে উঠে আসে ওই গবেষণায়। শিকাগোর এক কিশোরের ভাষায়, ‘আমি চুরি করা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলি না। আমি একটি দোকানে চলে যাই এবং আমার প্রয়োজনমতো কিছু একটা নিয়ে খুব দ্রুতই বেরিয়ে যাই। দোকানদার এটা টেরও পায় না। এটা করা ছাড়া আর আমার সামনে কোনো উপায় নেই।’

সাত-আট বছর বয়স থেকেই চুরির এমন অভ্যাস গড়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কিশোরের মধ্যেই। এরমধ্যে ছেলেরা সাধারণত মোবাইল ফোন, জুতা, জুয়েলারি বা বাইক বেশি চুরি করে থাকে। এছাড়া কিশোরদের মধ্যে মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের এক কিশোরের ভাষ্য, ‘অল্পবয়সী অনেক ছেলেরাই পরিবারের জন্য অর্থ জোগাতে মাদক বিক্রি করে থাকে। অনেকে এটাকে ভালো মনে করলেও এটা জীবনকে শেষ করে দেয়।’

আরবান ইনস্টিটিউটের এই গবেষণার প্রধান গবেষক সুসান পপকিন। তিনি স্বল্প আয়ের পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। অতি দরিদ্র এলাকাগুলোতে নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ও শারীরিক সুযোগ দিতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকির কথা তিনি আগেও বলেছেন। তবে কিশোরীদের শুধু এক বেলার খাবার জোগাড় করতে অনেক বয়স্কদের সঙ্গে ডেটিংয়ে যাওয়া কিংবা সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেহ বিক্রিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাকে তিনি নতুন বলছেন।

সুসান বলেন, ‘খাবারের জন্য এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠাটা আমাকে ভীষণ আহত করেছে। আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ধনী দেশেও খাদ্য নিয়ে এমন নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি মেনে নেয়া কঠিন। বিশেষ করে কিশোরীদের প্রসঙ্গে এই নারী গবেষক বলেন, গবেষণায় অংশ নেয়া ফোকাস গ্রুপগুলোর সবাই এটা জানে যে, মেয়েদের সঙ্গে কী ঘটছে। তারা জানে, কিশোরীদের শরীরের ওপর সুযোগ নিচ্ছে অন্যরা।

এতদিন ধরে এমন যৌন হয়রানির কথা শরণার্থীদের প্রসঙ্গে শোনা গেলেও এটা নিয়মিত ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রেই। খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা এই কিশোরীদের মরিয়া করে তুলেছে। গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ২০ বছর আগের কল্যাণ সংস্কার আইনকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সুসান বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতায় থাকা কিশোর-কিশোরীরা যা করছে তাতে তাদের আইন তাদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছি। আমরা নীতিগত জায়গায় এমন পরিবর্তন চাই যাতে কিশোর-কিশোরীদের অপরাধী বিবেচনা না করে তাদের পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য প্রকৃত সহায়তা করা হয়।’

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও