ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কেন যৌনতায় আগ্রহ হারাচ্ছে জাপানের মেয়েরা?


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৭, ০৩:৩০ পিএম আপডেট: জুন ২৪, ২০১৭, ০৯:৩০ এএম
কেন যৌনতায় আগ্রহ হারাচ্ছে জাপানের মেয়েরা?

জাপানের এক কর্মজীবী নারী মিনা সাইতো। ৩৯ বছর বয়সী মিনা মা-বাবার সঙ্গে থাকেন জাপানের সাপ্পোরো শহরে। কাজ করেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তার অফিসের সময় সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। কিন্তু এই নারী কাজ করেন প্রতিদিন কাজ করেন প্রায় রাত নয়টা পর্যন্ত। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা হয়ে যায়।

এই বয়স পর্যন্ত জীবনের কোনও সঙ্গী বেছে নেননি মিনা। জীবনে একটা প্রেম অবশ্য করেছিলেন। তখন প্রেমিকের সঙ্গে বাইরে ঘুরতেন বা এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করতেন। তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই আনন্দ পেতেন। তবে সেই আনন্দের চেয়ে তিনি বেশি শান্তি পেতেন পরিবারের সঙ্গে থাকার সময়। কাজের ব্যস্ততার কারণে এখন আর তার নতুন করে প্রেমে পড়ার সময় কিংবা অনুভূতি- কোনোটাই নেই। মা-বাবা বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তা করলেও তাকে সরাসরি আগেও কিছু বলেননি, এখনো কিছু বলেন না।

২০১০ সালে জাপানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ৫০ বছর বয়সের পুরুষদের পাঁচজনের মধ্যে একজন এবং একই বয়সের নারীদের দশ জনের মধ্যে একজন অবিবাহিত। তারা কখনোই বিয়ে করেননি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, এ হার ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

মিনার সমবয়সী বান্ধবীদের মধ্যেও অবিবাহিত বান্ধবী অনেক আছে। তারা একইভাবে মনে করছেন, বিয়ে করার তেমন প্রয়োজন নেই। কারণ তাদের চাকরি আছে, বাসা আছে, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা আছে।

দেশটির জনসংখ্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা বলছে, জাপানে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সের অন্তত ৬০ শতাংশ নারী রয়েছেন অবিবাহিত। এমনকি এসব নারী কখনো প্রেমই করেননি। দেশটির ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ নারীও দিয়েছেন এমনই স্বীকারোক্তি। তারা কখনো যৌন সম্পর্কও স্থাপন করেনি। এই ব্যাপারে আগ্রহও নেই তাদের। বরং নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এসব নারী।

আর এই কারণে জাপানের সমাজে বর্তমানে জন্মহার কমে যাচ্ছে। জাপানিরা সাধারণত বিবাহ পদ্ধতির মধ্যে সন্তানের জন্ম দেয়। জন্মহার বাড়াতে চাইলে বিয়ের হারও বাড়ানো দরকার। সমাজের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নিয়ম বদল করে নেয়া হলে জন্মহার বাড়ানোর অবস্থা আরও ভালোভাবে তৈরি হবে। যেমন কর্মজীবী মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, সরকারি নার্সারি বা শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু মুশকিল হলো, বিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত ধারণার ওপর অনেকটা নির্ভর করে।

বিয়ে করার প্রয়োজন আছে কি? জাপানের কর্মজীবী নারীদের এ রকম প্রশ্নের উত্তর আমরা কীভাবে দেব, তা অনেকটাই নির্ভর করবে বিয়ে আমরা কীভাবে দেখি তার ওপর।

বিয়ের প্রতি এই অনীহার কারণে গত কয়েক বছর ধরে জাপানে জন্মহার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে মৃত্যুহার। এতে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাদের অর্থনীতি, শ্রম বাজার, গৃহায়ন ব্যবসা, ভোক্তা ব্যয় ও দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে। শ্রমিক এবং ভোক্তা সংখ্যা কমতে থাকলেও এখনও উন্নতির দিকেই যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। এর অন্যতম একটি কারণ, বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়া। তবে প্রকৃতপক্ষে জাপানি অর্থনীতির গতি শ্লথ হতে শুরু করে দিয়েছে।

চলতি দশকের শুরুতে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে সেখান থেকে এই সংখ্যা কমেছে ১০ লাখ। জনমিতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৬০ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা কমে যাবে ৮০ লাখ। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর কমবে ১০ লাখ। একটি দেশে যত বেশি যুবক বয়সের লোক থাকে, তার মানে তত বেশি যুবক কর্মী আছে। তারা কাজ করে দেশের ওপর অবসরপ্রাপ্তদের চাপ কমায়। তাদের অবসর ভাতা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সহজ হয়।

একশ বছরের বেশি সময় আগে থেকে সদ্যোজাত শিশুদের গণনা করতে শুরু করে জাপান। তখন থেকে প্রতি বছর তাদের জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১০ লাখ শিশু। কিন্তু এখন দেশটির অবস্থা তার উল্টো পথে। দিন দিন জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে জাপানের। গত বছর প্রথমবারের মতো শিশু জন্মের সংখ্যা ১০ লাখের চেয়ে কমে গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এর আগে ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তব্যে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাদের দেশের এই জনসংখ্যা সংকট নিরসনে একটি ‘জাতীয় আন্দোলন’ শুরুর আহ্বান জানান। এরই মধ্যে জাপান সরকার বয়স্কদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কোম্পানিগুলোকে যন্ত্রনির্ভর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে।

আবে বলেন, ‘শ্রমিক সঙ্কট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের বাচ্চা উৎপাদন করতে হবে।’ অধিক সন্তান নিতে নারীদের নানাভাবে উৎসাগিত করছে জাপান সরকার। এদিকে বাইরে থেকে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারেও আপত্তি আছে জাপানিদের।

জাপানের এই সংকটের কারণ, যৌনতার ব্যাপারে অনীহা আছে দেশটির জনগণের। বিশেষ করে নারীদের। নিজেদের ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে গিয়ে বিয়েতে আগ্রহ থাকে না তাদের। শুধু তাই নয়, কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করেন না তারা। আর এতেই জাপানের জাতীয় অর্থনীতি সঙ্কটে পড়তে শুরু করেছে। তাদের জনসংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংকট নিরসনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশের জন্মহার বাড়াতে নানা কর্মসূচি নিয়েছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে জন্মহার ১.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১.৮ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে শিশু পালনের নানা সুবিধা, বিবাহিত দম্পতিদের জন্য করছাড়সহ নানা প্রণোদনা। তবে তা সত্ত্বেও ক্রমেই নিঃসঙ্গ জীবনযাত্রায় অভ্যস্থ হয়ে পড়া জাপানের মেয়েরা যৌনাচার কিংবা বিয়ের পথে আর হাঁটতে আগ্রহ পাচ্ছেন না।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র