ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিশোর সাগর এবং বৃষ্টিমাখা আকাশ!


গো নিউজ২৪ | নিয়ন মতিয়ুল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৭, ০৭:১৬ পিএম
কিশোর সাগর এবং বৃষ্টিমাখা আকাশ!

আলী ফিদা একরাম তোজো একজন প্রতিভাধর মানুষ। নব্বইয়ের দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীর জড়িয়ে পড়েন ছবি তৈরিতে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে শুরু করেন সৃজনশীল কাজ। এখন পুরোদস্তর নাট্যব্যক্তিত্ব।

কলেজে পড়ার সময় আমি ছিলাম তার কবিতার ভক্ত। হঠাৎ একদিন তার সঙ্গে দেখা আমার ছাত্রাবাসেই। সেদিন আমার ডায়েরিতে নান্দনিক হস্তাক্ষরে লিখে দিয়েছিলেন দুটো অসাধারণ কবিতা। যদিও তার সেসব অসাধারণ কবিতা কখনও প্রকাশের মুখ দেখেনি। কারণ, তিনি বলতেন, কবিতা তার একান্তই নিজের।

আজ হঠাৎ করেই আলী ফিদার কবিতার কথা মনে পড়ছে। তার একটি কবিতার একাংশে পড়েছিলাম- 
‘...শুধু চারপাশের মানুষেরাই নয়
অবাক হয়ে লক্ষ্য করি 
ইদানিং আমার হাত, আমার পা-ও
আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে..।’

বড় অদ্ভুত লাগে এরকম কবিতা পড়তে। চারপাশের বিরূপ সমাজ বোধ হয় দিন দিন আমাদের নিজেদের চিনতেও ভুলিয়ে দিচ্ছে। আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। শত সফলতার মাঝেও ভেতরের আলো যেন বড় নিষ্প্রভ হয়ে পড়ছে দিন দিন।

আলী ফিদা তোজার আরেকটি কবিতার অংশ বেশ মনে পড়ে...
‘...বড় আশা করে ছিপ ফেললাম সাগরে
মাছ ধরবো বলে
কিন্তু কি আশ্চর্য! ছিপ থাকলো ছিপের জায়গায়
গোটা সাগরটাই উঠে এলো বড়শির সঙ্গে...’।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক আর সমাজে হতাশা এমনভাবেই হয়তো জায়গা নিয়ে নিয়েছে। চারদিকে ঝলমলে আলো, অথচ এই আলোর মধ্যেই যতো অন্ধকার। আমরা কাঁদছি হাউ মাউ করে, ভেতরে ভেতরে। তবে নিস্তব্ধ সে কান্না। কারো কানেই যাচ্ছে না সে কান্নার শব্দ।

আজ সকাল থেকে মনটা বৃষ্টিমাখা আকাশের মতোই হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বর্বর নির্যাতনে কিশোর সাগরের মৃত্যুর আগের মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। মৃত্যুর আগে সাগর কী বলে গেছে তা জানি না। তবে সাগরের সেই প্রশ্নটি বিদ্ধ করেছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালকে। লজ্জায়, ঘৃণায়, কুঁকড়ে গিয়ে তিনি সাগরের প্রশ্নটিই করে বসেছেন, আমরা কি মানুষের সমাজে বাস করি?

সাগর হত্যার মূল হোতা আক্কাস আলীকে অবশেষে ধরতে সক্ষম হয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের জেরার জবাবে সাগরকে নৃশংস-পাশবিকভাবে হত্যার বর্ণনাও দিয়েছে আক্কাস। কেউ কেউ হয়তো আশ্বস্ত হয়েছেন এবার শাস্তি পাবে আক্কাসরা। যদিও এর আগেও আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম রাজন-রাকিব হত্যাকারীদের শাস্তি হওয়াতে। কিন্তু বন্ধ কি হয়েছে এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড?

মাস খানেক হলো আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ঘৃণ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। গণহত্যা নতুন কোনো শব্দ নয়। এর আগেও যুগে যুগে হয়েছে, হচ্ছে আজও। মানুষ হয়ে মানুষের রক্ত নিয়ে এমন খেলা আমরা ঐতিহাসিকভাবেই খেলে যাচ্ছি। জাতি জাতিতে দেশে দেশে গণহত্যার কত নজির আমাদের।

বিজ্ঞান প্রযুক্তির জয়জয়কার, শিক্ষার সীমাহীন বিস্তার আর জন ও মানবসেবার মহান দৃষ্টান্ত দেশে দেশে রয়েছে। উন্নত সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। পশ্চিমা দেশগুলো সভ্যতার শিখরে উঠেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো সভ্যতার আলো ছড়াচ্ছে। আর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছে- এমনই বিশ্বাস আর গর্ব আমাদের। ভাবতে গিয়ে কেউ কেউ হয়তো অবাক হন যে, সভ্যতার যেভাবে বিস্তার হচ্ছে ঠিক একইভাবে অসভ্যতা আর নৃশংসতার বিস্তারও হচ্ছে।

আমাদের গণ ও সংবাদমাধ্যমগুলো সভ্যতা নির্মাণে বেশ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে অসভ্যতা, নৃশংসতার বিরুদ্ধে যারা উচ্চকণ্ঠ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছে। মনস্তাস্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। মানুষ হয়ে মানুষের ওপর এমন নৃশংসতায় যারা লজ্জায়, ঘৃণায়, কুঁকড়ে যাচ্ছেন তাদের দীর্ঘশ্বাস প্রকাশ করছে। কিন্তু সত্যিই কি আমরা থামাতে পেরেছি বর্বরতা-নৃশংসতা? তাহলে কি দিন দিন আমাদের বিবেকই হয়ে পড়েছে বিশ্বাসঘাতক?

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই সভ্যতার খোঁজ করছে মানবজাতি। পৃথিবীর এই বিশালজনগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ না কেউ বের হয়ে আসেন মানবতার কল্যাণে নিরন্তন কাজ করার জন্য। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের প্রবর্তক আর অনুসারীরা মানবজাতির কল্যাণে কত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কত পন্থা বের করার চেষ্টা করে গেছেন। এখনও তা অব্যাহত রয়ে গেছে।

কেউ কেউ দাবি করেন, পৃথিবী আগের চেয়ে অনেক বেশি সভ্য, অনেক বেশি মানবিক। মানুষ মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেগ আর সহানুভূতিময়। আমাদের মানবিক অনুভূতি অতীতের চেয়ে আরো বেশি সুক্ষ্ম হয়েছে। একটুতেই আমরা বেশি কষ্ট পাই।

বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে, কালের বিবর্তনে মানুষ সভ্য হয়ে উঠলেও জেনেটিকেলি তার ভেতরে রয়ে গেছে আদিম সত্তা। যা ধ্বংস-বিনাশ আর নৃশংস প্রবণতার কারণ। কখনও কখনও আদিমসত্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মানুষের মধ্যে।

সভ্যতা বিনির্মাণে ধর্মীয় চেতনা, নীতিবোধ, নৈতিকতা, আইন প্রয়োগ আমাদের অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। আজ আমরা আলোকিত জগতের বাসিন্দা। মহাবিশ্বের উন্নত প্রজাতির মেধাসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে নিজেদের দাবি করছি। কিন্তু তার পরেও ঝলমলে এ সভ্যতার কোথাও যেন নিকষ অন্ধকার। এ অন্ধকার দূর করতে যেখানে ধর্মীয় চেতনা, নীতিবোধ, নৈতিকতা, আইন প্রয়োগ প্রায়ই ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে আর কোনো বিকল্প কি আছে ব্রহ্মাণ্ডের এই উন্নত প্রজাতির হাতে?

গোনিউজ২৪/এন

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ