ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কলকাতা থেকে কবে আসবে রোকেয়ার মরদেহ?


গো নিউজ২৪ | স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৭, ১১:২৬ এএম
কলকাতা থেকে কবে আসবে রোকেয়ার মরদেহ?

রংপুর: আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৭ তম জন্ম ও ৮৫ তম মৃত্যু দিবস আজ। 

উপ-মহাদেশের নারীসমাজকে কু-সংস্কারের দেয়াল ছেদ করে আলোর মশাল হাতে ধরিয়ে দেয়া এই নারীর অনুরাগীদের মন ভালো নেই। সরকারের অবহেলা আর উদ্যোগহীনতার কারণে এখানে রোকেয়া চর্চা ও পর্যটন কেন্দ্রের দ্বার রুদ্ধ। আট বছর আগে জেলা প্রশাসনের দেয়া রোকেয়ার দেহাবশেষ কোলকাতা থেকে পায়রাবন্দে আনার প্রতিশ্রুতি এখনো লালফিতায় বন্দিই রয়ে গেছে। 

বেগম রোকেয়ার জন্ম রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরাণী।

তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তার বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি, তাদের ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের রোকেয়া ও অপর বোন করিমুননেসাকে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।

১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। স্বামীর সহযোগিতায় তিনি ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। সমাজমনস্ক রোকেয়ার স্বামী সব সময় নারীশিক্ষার কথা বলতেন। নারীদের শিক্ষার উন্নতির জন্য তিনি স্ত্রীকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন এবং স্ত্রী রোকেয়াকে তার সম্পত্তির ট্রাস্টি করে যান। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে পদার্পণ করেন।

২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে কোলকাতায় যান তিনি। এরপর তিনি দু পারেই নারী জাগরণ ও উন্নয়নে কাজ করেছেন।

নারী জাগানিয়া চিন্তা থেকে লিখেছেন অবিরাম-অবিরত। সমাজের কুসংস্কার ভাঙ্গতে করেছেন সময়ের সাহসী উচ্চারণ। তার লেখা অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ সে সময় নারী জাগরণ আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে। আজও তা আন্দোলিত করছে বিশ্ব নারী সভ্যতাকে। 

মহিয়সী এই নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কোলাকাতায় মারা যান। কোলকাতার সোদপুরে তাকে সমাহিত করা হয়। 

মরদেহ আনার ঘোষণা ও কালক্ষেপণ: 
বর্তমান সরকারের আমলে পাকিস্তান থেকে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের মরদেহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আনার পর রংপুর অঞ্চলের মানুষ রোকেয়ার মরদেহটিও পায়রাবন্দে এনে সমাহিত করার দাবিতে জোড়ালো আন্দোলনে নামেন। 

২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া মেলায় রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক দাবিটির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর থেকে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ, বেগম রোকেয়া ফোরাম, বেগম রোকেয়া পাঠাগারসহ বিভিন্ন সংগঠন এই দাবি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এ নিয়ে এখনো এ অঞ্চলে চলছে সভা, সিম্পোজিয়াম, গোলটেবিল বৈঠকসহ নানা কর্মসূচি। সাংবাদিক সম্মেলন করে রোকেয়া অনুরাগীরা দাবিটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলেও জানিয়েছেন। 

২০১০ সালে রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক বলেছিলেন, ‘মরদেহ পায়রাবন্দে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আগামী বছর (২০১১) রোকেয়া দিবসের আগে তার মরদেহ পায়রাবন্দে আসবে। কিন্তু তার ঘোষণার পর ৭ বছর চলে গেছে। কিন্তু আজও এ ব্যপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন। 

বেগম রোকেয়াকে নীতিনির্ধারক মহলে গুরুত্ব দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করে পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, ‘বিশ্বব্যাপী বিবিসি’র জরিপে বিশ্বসেরা ২০ নারীর তালিকায় ৬ নম্বর স্থান পাওয়া বেগম রোকেয়ার মরদেহ পূর্বের ডিসি সাহেব ঘোষণা দিয়েছিলেন পায়রাবন্দে আসবে। কিন্তু সেই ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত এখন ফাইলবন্দি’। 

অন্যদিকে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ একরামুল হক বলেন, ‘২০০৯ সালে প্রশাসনের আশার প্রেক্ষিতে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভেবেছিলাম ২০১০ সাল থেকেই রোকেয়ার সমাধিতে আমরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে পারবো। কিন্তু সেই আশায় বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। ঘোষণা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই।’  

একজন মহিয়সী নারীকে নিয়ে প্রশাসনের এরকম প্রহসন উচিত হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান ইসলাম বলেন, ‘হাততালি নেয়ার জন্য ডিসি সাহেব যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা এখন স্পষ্ট’। 

এদিকে রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন, ‘সরকারের কি এমন সমস্যা যে আমাদের এই সামান্য দাবিটুকুও পূরণ করতে পারছে না। অন্যদের মরদেহ যদি আনা যায়। তবে কেন রোকেয়ার মরদেহ আনতে সরকার এত টালবাহনা করছে। তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ 

এ ব্যপারে কথা বলার জন্য রংপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মুহম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। 

কর্মসূচি : 
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ শনিবার থেকে রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে ৩ দিনব্যাপী রোকেয়া মেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্বেচ্ছা রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, পায়রাবন্দ জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, নাটিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার প্রদান, পদক বিতরণ এবং আলোচনা সভা।
 
অপরদিকে বেগম রোকেয়া ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক র‌্যালি, আলোচনা সভা, নারী সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নির্ধারিত বক্তৃতা, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করেছে।

গোনিউজ/এমবি
 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়