ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঋতুবতী মেয়েদের আনন্দে রাখতে ‘রজ উৎসব’ করে উড়িষ্যাবাসী


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০১৭, ০৫:০৬ পিএম আপডেট: আগস্ট ২২, ২০১৭, ১১:১৫ এএম
ঋতুবতী মেয়েদের আনন্দে রাখতে ‘রজ উৎসব’ করে উড়িষ্যাবাসী

সত্যিই বহুসংস্কৃতির দেশ ভারত। দেশটির প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতিটি রাজ্যেই পাওয়া যায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের এই নিদর্শন। এমনই একটি ব্যতিক্রমী উৎসব দেখা যায় ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে। রক্ষণশীল ভারতীয় সমাজের চোখরাঙানির মধ্যে থেকেও উড়িষ্যার এই উৎসবটি স্বতন্ত্র। চলতি বছরও অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এই অনুষ্ঠান।

স্থানীয় রীতি অনুসারে মনে করা হয়, এই সময়ে ঋতুমতী হন ‘মা কামাক্ষ্যা’। চার দিন বন্ধ থাকে কামাক্ষ্যা মন্দির। মা জেগে উঠবেন। তাকে দেখা বারণ, ছোঁয়া বারণ। কামাক্ষ্যার যোনিপীঠ ঢাকা থাকবে লাল পাড় সাদা শাড়িতে। তিনি যখন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, তখনই মন্দির চত্বরে উৎসবে মেতে উঠবেন ভক্তরা। চার দিন ধরে চলবে অম্বুবাচীর মেলা। তান্ত্রিক, অঘোরদের আখড়া জমে উঠবে সেখানে।

এই সময়ে ‘কামাক্ষ্যা মা’ সবচেয়ে জাগ্রত। আষাঢ় মাসের অমাবশ্যায় তন্ত্র সাধনার জন্য বছরের পূণ্যতম দিন। এই রীতি বহু শতাব্দী প্রাচীন। কামাক্ষ্যার যোনিপীঠের ওপর বিছিয়ে দেয়া সাদা কাপড় কীভাবে চার দিন পর লাল হয়ে ওঠে- এ নিয়ে বিতর্ক, যুক্তিতর্ক থাকলেও একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেসব সরিয়ে রেখে বছরের পর বছর আষাঢ় মাসে পালিত হয়ে চলেছে অম্বুবাচী।

বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞরা কামাক্ষ্যা মন্দিরের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বর্ষাকালে ফুলে ওঠা, আর সেই পানিতে সারাবছর সিঁদুর, কুমকুমে পূর্ণ কামাক্ষ্যার যোনি ধুয়ে যাওয়া পানিতে সাদা কাপড় লাল হয়ে ওঠার তত্ত্ব দিলেও, ধর্মীয় বিশ্বাসের কাছে তা ধোপে টেকেনি।

কামাক্ষ্যার অম্বুবাচী পালন নিয়ে সারা ভারত উত্সবে মাতলেও প্রায় অজানাই থেকে গেছে উড়িষ্যার ‘রজ পর্ব’। ধরিত্রী ঋতুমতী হওয়ার আনন্দে গোটা উড়িষ্যাজুড়ে যে উত্সব হয়, রাজ্যের বাইরে তার খবর প্রায় পৌঁছায় না। ঋতুস্রাব নিয়ে যে প্রচলিত ট্যাবু, কুসংস্কার বয়ে চলেছে ভারত, তার থেকে অনেকটাই উল্টো সুর এই উৎসবের।

আষাঢ় মাসে সূর্য মিথুন রাশিতে প্রবেশের সময় ঋতুমতী হয়ে ওঠেন ভূদেবী। পুরাণ মতে, কাশ্যপ প্রজাপতির কন্যা ভূদেবী। উর্বরতার দেবী ভূদেবীকে রামায়নে ব্যক্ত করা হয়েছে সীতার মা হিসেবে। আবার তামিল সাধু-কবি অন্ডালের রচনা অনুযায়ী, এই ভূদেবীই দ্বাপর যুগে আবির্ভূত হয়ে ছিলেন সত্যভামা রূপে। যখন তিনি শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী। উড়িষ্যায় জগন্নাথের স্ত্রী হিসেবেই পূজিত হন ভূদেবী। মেয়েরা এই সময়টায় শারীরিক, মানসিকভাবে অনেক অসুবিধার মধ্য দিয়ে গিয়েও সব কাজকর্ম সামলান। এ সময় তাদের প্রয়োজন যত্ন, খুশি থাকা। তাই, নিয়েই উড়িষ্যার এই বিশেষ উৎসব।

চার দিনব্যাপী এই উৎসবের চতুর্থ দিনে গোসল করেন ভূদেবী। প্রথম দিনকে বলা হয় পহিলি রজ। দ্বিতীয় দিন মিথুন সংক্রান্তি। সূর্যের মিথুন রাশিতে প্রবেশ করার দিন। তৃতীয় দিন ভূদহ বা বাসি রজ এবং চতুর্থ দিন বসুমতী স্নান। প্রাচীন কাল থেকে এই চার দিনব্যাপী উত্সব উদযাপিত হয়ে আসছে উড়িষ্যায়।

পৃথিবী এই সময় পুনরুজ্জীবনের মধ্য দিয়ে যায়। এ সময় তার প্রয়োজন বিশ্রাম ও বিশেষ যত্ন। মেয়েদের তাই বিরত রাখা হতো কৃষি এবং গৃহস্থালির মতো কাজ থেকে। এই তিন দিন শুধুই তাদের আরাম করা, পছন্দের খাবার খাওয়া, যত্ন আর প্রশ্রয় পাওয়ার সময়। উড়িষ্যার বিভিন্ন প্রান্তে মেলায় ঘুরে, সাজগোজ করে, দোলনায় ঝুলে এই সময় উপভোগ করেন নারীরা।

প্রাচীন রীতি মেনেই বর্তমানে বিভিন্ন অফিস, কর্পোরেটেও মেয়েদের জন্য থাকে এই সময় বিশেষ ব্যবস্থা। উপহার দেয়া থেকে শুরু করে বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন সংস্থায়। সারা দেশে যে সময়টায় মেয়েদের অচ্ছুৎ করে রাখার প্রক্রিয়া, স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার সেই সময় যে খুশি, আরামের প্রয়োজনের কথা চিকিত্সকরা বলে থাকেন তার প্রতিফলন দেখা যায় উড়িষ্যার এই উৎসবেই।

কখনো অম্বুবাচী, কখনো রজ পর্ব, বিভিন্ন উপজাতি জানা-অজানা আচারে বরণ করে নেয় বর্ষাকে। বৃষ্টি যেখানে ঋতুস্রাব, সেখানে রক্ষণশীল সমাজের চোখরাঙানির মধ্যে থেকেও উড়িষ্যার উত্সব স্বতন্ত্র।

ভারতের কোনো কোনো রাজ্যে ঋতুবতী মেয়েদের নিয়ে এখনো প্রচলিত আছে চৌপদী প্রথা। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের মনে করা হয় অপবিত্র। আর এই কারণে বিশেষ এই সময়ে তাদের রাখা হয় ঘরের বাইরে। ঋতুকাল শেষ হলে একবারে গোসল করে ঘরে ফেরেন তারা। এর বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা। অনেক সময় দেখা যায়, ঘরের বাইরে গোয়ালঘরে রাখা হয় মেয়েদের। কোথাও তাদের আলাদা ঘরে করে দেয়া হয়। এতে তাদের ওপর হিংস্র প্রাণির আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে।

নেপালেও আছে এই প্রথা। অবশ্য সম্প্রতি একে নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে দেশটির সংসদ। এমনিতেই ঋতুকাল মানেই নারীদের জন্য কষ্টকর একটি সময়। সেই অবস্থায়ই প্রাচীন এই হিন্দু প্রথা মেনে তাকে ‘নির্বাসনে’ দেয়া হতো অস্বাস্থ্যকর আর অনিরাপদ স্থানে। ধর্মীয় সম্পৃক্ততা থাকায় এ নিয়মের কোনো ব্যাত্যয় হতো না।

বিভিন্ন সময়ে দেখা যেতো, একাকী কুঁড়েঘরে বাস করার সময় তীব্র শীতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ পড়তো মেয়েরা। কখনো কখনো হিংস্র জন্তুর আক্রমণেরও শিকার হতে হতো। কিছুদিন আগে নেপালে গোয়ালঘরে সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছিল এমন এক কিশোরীর। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। এরপরই সরব হন মানবাধিকার কর্মীরা।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও