ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উপসাগরীয় সংকটে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন কাতারি আমির


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০১৭, ০৯:৪২ এএম
উপসাগরীয় সংকটে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন কাতারি আমির

চলমান কূটনৈতিক সংকট নিরসনে অবরোধ আরোপকারী সৌদি নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাতার আলোচনায় রাজি বলে জানিয়েছেন দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তবে তা অবশ্যই কাতারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই হতে হবে বলেও জোর দিয়েছেন তিনি।

গত ৫ জুন সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর শুক্রবার প্রথম এ বিষয়ে টেলিভিশনে বক্তব্য দেন শেখ তামিম। তিনি বলেন, ‘চলমান সংকট নিরসনে আমাদের আলোচনার দার খোলা। তবে অবশ্যই কাতারের সর্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, তার দেশ নজিরবিহীন অপপ্রচারের শিকার। বক্তব্যে সংকটক নিরসনে কুয়েতের মধ্যস্থতা চেষ্টা, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং জার্মানির সহযোগিতারও প্রশংসা করেন কাতারি আমির।

সংকটের সময় আগে থেকে থাকা একটি সহযোগিতা চুক্তি দ্রুত কার্যকর এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে তুরস্কের ভূমিকার জন্য দেশটিকে ধন্যবাদ দেন তিনি। শেখ তামিম বলেন, ‘এটা এখন স্পষ্ট, আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। আমরা এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি এবং সফল হয়েছি।’

মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, গত ২৩ মে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা হ্যাকিংয়ের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আর তার পরদিনই কাতার সরকারের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। হ্যাকাররা কাতারের সরকারি গণমাধ্যম কিউএনএ’র ওয়েবসাইটে একটি ভুয়া প্রতিবেদন যুক্ত করে দেয়। এতে দেখা যায়, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরান, হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় টিকে থাকবেন কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

এই ঘটনার পর গত ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। সড়কপথ, নৌ-পথ ও আকাশ পথেও কাতারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আরব দেশগুলো। অবশ্য ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।

এদিকে তবে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কাতার। সোমবার কাতার সরকারের যোগাযোগ কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত খবরের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আমিরাত এবং জ্যেষ্ঠ আমিরাতি কর্মকর্তাদের হ্যাকিংয়ে জড়িত থাকার তথ্য বের হয়ে এসেছে। এ খবরটির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, হ্যাকিংজনিত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতাজনিত চুক্তির লঙ্ঘন। একইসঙ্গে আরব লিগ, ওআইসি এবং জাতিসংঘের সঙ্গে হওয়া সম্মিলিত চুক্তিরও লঙ্ঘন এটি।’

জুন মাসে সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি আরব রাষ্ট্র ২২ জুন ১৩ দফা দাবির একটি তালিকা দেয় দোহাকে। এতে আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ আরও কিছু দাবি পূরণের কথা বলা হয়। ওইসব দাবির তালিকায় আরও আছে: কাতারে নির্মিত তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করা এবং যেসব ব্যক্তিকে তাদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া।

শর্ত পূরণে ১০ দিনের সময়সীমা দেয়া হয়। সে সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ২ জুলাই দুইদিন সময় বাড়ানোর কথা জানায় সৌদি সূত্র। সেই সময়সীমাও শেষ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। সম্প্রতি অবশ্য আল জাজিরা বন্ধের দাবি থেকে সরে এসেছে আরব দেশগুলো।

আরব বিশ্বের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুড, হিজবুল্লাহ, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বলা হয় কাতারকে। অবশ্য দেশটি আগে থেকেই বলে আসছে, এসব সংগঠনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। কাতার শর্তগুলো মেনে নিলে প্রথম বছর প্রতি মাসে একবার দেশটির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় বছরে তিন মাস পরপর এটা করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর বাৎসরিকভাবে কাতারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, আরব দেশগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।

২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর চালানো হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতন। এতে সমর্থন দেয় সৌদি সরকার।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র