ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউরোপের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় আর থাকছে না হামাস!


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৭, ১১:৫৯ এএম
ইউরোপের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় আর থাকছে না হামাস!

ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন হামাসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ‘সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিৎ কি না- এ বিষয়ে বুধবার একটি রায় দিতে যাচ্ছে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়নস কোর্ট অব জাস্টিস’ (ইইউ বিচার আদালত)। রায়ে ফিলিস্তিনের এই রাজনৈতিক সংগঠনটিকে ওই তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রায় হামাসের পক্ষে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশ দুটি হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। এর আগে পূর্ব-জেরুজালেম এবং পশ্চিমতীরে বসতি নির্মাণ নিয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে ইইউ। এ নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে উত্তেজনা চলছে ইসরায়েলের। চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে রায় দিতে যাচ্ছে ইউরোপের আদালত।

এছাড়া সম্প্রতি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে নতুন করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ফিলিস্তিনির সঙ্গে উত্তেজনা চলছে ইসরায়েলের। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে সংঘর্ষে। ওই ঘটনায় ইসরায়েলকে ‘সীমা অতিক্রম না করতে’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে হামাস।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপের একটি নিম্ন আদালতের রায়ে হামাসকে কথিত সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য বলা হয়। ওই রায়ে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপের দেশগুলো স্বাধীন কোনো তদন্তের ভিত্তিতে নয়; বরং বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে এবং নিষেধাজ্ঞার আওতায় রেখেছে।

এই রায় পুনর্মূল্যায়নের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নস কোর্ট অব জাস্টিসে আপিল করে ইউরোপীয় কাউন্সিল। অবশেষ সেই আপিলের রায় দিতে যাচ্ছে সংস্থাটির সর্বোচ্চ আদালত। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোর্ট অব জাস্টিসের অ্যাডভোকেট জেনারেল এলিনর শার্পস্টোন হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন।

এই নারী আইনজীবী বলেন, ‘তালিকাভুক্তির ব্যাপারে যোগ্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বদলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত আর্টিক্যাল এবং ইন্টারনেটের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে পারে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’ ফিলিস্তিনি ওই রাজনৈতিক দলটিকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০০৬ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষ ফাতাহকে পরাজিত করে ২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা শাসন করছে হামাস। সেখান থেকে ফাতাহকে উৎখাত করেছে তারা। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল ফাতাহ বর্তমানে পশ্চিমতীর শাসন করছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আল-কায়েদার হামলার পর হামাসের সম্পত্তি জব্দ এবং সংগঠনটির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি বলে শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছে তারা। হামাস মনে করে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের অধিকার আছে তাদের।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুনে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে নতুন সনদ (চার্টার) প্রকাশ করে হামাস। ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৬৭ সালের সীমানা মেনে নিয়েই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন সনদে। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হামাসের প্রথম সনদে বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রসহ ফিলিস্তিন গঠনের প্রস্তাবনা ছিল। এতে ১৯৬৭ সালের সীমানা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠাকালীন সনদে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দ্বন্দ্বকে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব হিসেবে উল্লেখ করা হলেও নতুনটিতে একে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কাতারের রাজধানী দোহায় সনদটি প্রকাশ করেন হামাসের সাবেক রাজনৈতিক প্রধান খালেদ মেশাল। নতুন সনদে মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে সেখানে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক আইনে এ বসতি স্থাপন অবৈধ বিবেচনা করা হলেও দেশটি তা মানতে নারাজ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলে আসছে ওই ভূখণ্ডে। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় শান্তি আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়।

পূর্ব-জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে ইসরায়েল। অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের দাবির কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। ওই এলাকাকে নিজেদের রাজধানী বলে করে ফিলিস্তিনিরাও। ১৯৬৭ সালে দখলকৃত পশ্চিমতীরে বর্তমানে ৪ লাখ এবং পূর্ব-জেরুজালেমে ২ লাখ ইহুদি বসবাস করছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘ। দেশটির এ ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা বলেও উল্লেখ করা হয় সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের ওই প্রস্তাবে। তবে তখন এর বিরুদ্ধে দাঁড়ান বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে চলতি বছর ইসরায়েলকে ‘বর্ণবাদী’ রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তবনা পাস করে জাতিসংঘ।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র