ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমলের হিসাব-নিকাশ কিসের ভিত্তিতে?


গো নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬, ০৭:৫৮ এএম
আমলের হিসাব-নিকাশ কিসের ভিত্তিতে?

প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন রকমের ইবাদত করি, জীবন যাপনে মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করি। এ ইবাদত কিংবা বিধি-বিধান মেনে চলার যেটুকু প্রচেষ্টা আমরা আমাদের সাধ্যমতো চালিয়ে যাচ্ছি, এর হিসাব-নিকাশ জমা হচ্ছে অপার্থিব আমলনামায়। কিন্তু এ জমা হওয়া কিসের ভিত্তিতে? সংখ্যাধিক্য নাকি গুণগত মান অথবা অন্যকিছু? ব্যস্ত জীবনে যেখানে ইবাদতের অবসর দিন দিন কমে আসছে, সেখানে কবুল হওয়া-না হওয়া নিয়ে ভাববার সময় ও সচেতনতাও হারিয়ে ফেলছি আমাদের অজান্তে। অথচ এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের, সবচেয়ে বেশি বিবেচনার এবং সচেতনতার দাবি রাখে।

 

কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত সত্য হল- ইখলাস সব আমলের গ্রহণযোগ্যতার প্রথম শর্ত। ইখলাসবিহীন কোনো কিছুই আসমানি দরবারে কবুলযোগ্য নয়। বরং কখনো এমন আমল বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পার্থিব মোহ ও সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণের যাবতীয় লোভ থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্য সমর্পিত আত্মার সামান্য আমলও ইখলাসের কারণে অনেক বেশি মূল্যবান। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন। (বাইয়িনাহ:০৫)

 

অন্য একটি আয়াতে আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন,আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির মাংস পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)। (সূরা হাজ্জ্ব: ৩৭)

 

ইখলাসের বিষয়ে আমাদের নবী (সা) হাদিসে বলেছেন, উমার (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত ( দেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।(বুখারি ও মুসলিম)
অন্য আরো একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, উম্মুল মুমেনীন উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একটি বাহিনী কাবা ঘরের উপর আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে বের হবে। অতঃপর যখন তারা সমতল মরুপ্রান্তরে (বাইদা) পৌঁছবে তখন তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তি সকলকেই যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি (আয়েশা) বলেন যে, আমি (এ কথা শুনে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারের ব্যবসায়ী এবং এমন লোক থাকবে, যারা তাদের (আক্রমণকারীদের) অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি বললেন, তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তাদেরকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থিত করা হবে। ( বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের পূর্বসুরি আল্লাহওয়ালারা এমনভাবে নিজেদের সাধনা ও ইবাদতকে লোকসমাজ থেকে লুকিয়ে রাখতেন। যা কিছু ভালো ও পূণ্য তারা করতেন; তা কেবল আল্লাহ পাকের জন্যই করতেন। সমাজ ও মানুষের সব প্রশংসা ও বাহবা থেকে মোহমুক্ত হয়ে তারা নিমগ্ন হতেন ইখলাসযুক্ত ইবাদতে।

 

একটি হাদিসে এসেছে, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত তামীম দারিকে কেউ জিজ্ঞেস করলো, আপনি প্রতি রাতে কতো রাকাত নামাজ আদায় করেন? এমন প্রশ্ন শুনে তিনি খুব রেগে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, রাতের অন্ধকারে গোপনে এক রাকাত নামাজ পড়া আমার কাছে; এমন সারারাত নামাজের চেয়ে অনেক উত্তম- যা রাত পোহালে মানুষকে জানানো হয়।
নিজের ছোট-বড় নেক আমল মানুষের কাছে প্রচার না করে গোপন রাখার তাগিদ দিয়ে সাহাবি হজরত ইবনে মাসউদ বলেছেন, পৃথিবীবাসীর কাছে নিজেদের পূণ্য কর্মগুলো গোপন রাখো, এখানে পরিচিত ও সমাদৃত না হয়ে তোমরা আকাশজগতে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখো।

 

আমাদের ইবাদত চাই প্রকাশ্য হোক কিংবা অপকাশ্য আমাদের আমলে থাকতে হবে ইখলাস। তাহলেই আমরা আমল করে প্রকৃত আমলের স্বাদ পাব। আল্লাহপাক আমাদের ছোট, বড় আর প্রকাশ্য, অপকাশ্য সকল আমলকে ইখলাসের সাথে করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

ইসলাম বিভাগের আরো খবর
তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

তাবলিগের বিরোধটা আসলে কোথায়

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

ওয়াজ মাহফিল সরকারিভাবে মনিটরিংয়ের অনুরোধ

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করলে নামাজ হবে?

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

আশুরার দিনে যে দুইটি আমল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

পবিত্র আশুরা ২৯ জুলাই

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান