ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শান্তাবাই ও শেফালী শীলের গল্প (ভিডিও)


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০১৮, ০৮:১০ পিএম
শান্তাবাই ও শেফালী শীলের গল্প (ভিডিও)

ঢাকা :  দারিদ্রতা দূর করতে তার গল্প অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার বিষয়। তাইতো স্থানীয় শিক্ষকরা এক নারীর ছবি তাদের স্কুলের দেয়ালে টাঙিয়ে রেখেছে।আলোচিত এই নারীর নাম শান্তাবাই যাদব। তাকে বলা হয় ভারতের প্রথম মহিলা নাপিত। স্বামীর মৃত্যুর সন্তানদের নিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন এই নারী। কিভাবে সংসার চলবে, সন্তানদের নিয়ে কি খেয়ে বেঁচে থাকবে, কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না।

নিধারুণ কষ্টে একসময় বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেন খুড়-কাঁচি। হয়ে মহারাষ্ট্রের নারী নাপিত শান্তাবাই যাদব। ৪০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেন।

নাপিতের কাজ করে ৪ মেয়েকে খাইয়ে পড়িয়ে বড় করতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। বেঁচে থাকার তাগিদে কোনো উপায় না পেয়ে আদি পেশাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে চিন্তা ছিলো সমাজ তার এই কর্মকে কিভাবে নেয়।

পরে অবশ্য দেখেন, সবার সহযোগিতা ও সমর্থন পাচ্ছেন। ফলে কাজ বাড়তে থাকে এবং তার আয় বৃদ্ধি পায়। চুল কেটে ৩০ রুপি আর শেভ করিয়ে ২০ রুপি নেন শান্তাবাই যাদব। এই আয়ের পথ পেয়ে অত্যন্ত খুশি শান্তাবাই।

তবে এখন শুধু শান্তাবাই একা নন, ঠিক তারই মতো আর এক সংগ্রামী নারীর খোঁজ মিললো বাংলাদেশে। ঝালকাঠী জেলার কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা বাজারে দেখা গেল এক নারী নরসুন্দরের কাজ করছে। 

তিনি পশ্চিম ছিটকী গ্রামের দরিদ্র যাদব শীলের চতুর্থ সন্তান শেফালী শীল। দারিদ্রতার কারণে ৫ম শ্রেণি পর্যন্তই লেখাপড়ার সৌভাগ্য হয় তার। নিজের ইচ্ছা  না থাকলেও পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে আতরআলী গ্রামের বিশ্বনাথ শীলের সাথে মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। 

শুরু হয় দারিদ্রতা আর মানিয়ে নেয়ার জন্য জীবনের সাথে যুদ্ধ। জীবনকে বুঝে উঠার আগেই চার মেয়ে ও এক ছেলের মা হয় সে। একদিকে স্বামীর অবহেলা ও বেপরোয়া উদাসী জীবনযাপনের কারণে তার জীবন বিষন্নময় হয়ে ওঠে। 

এরপর সে প্রথমে তার পিতার বাড়িতে থাকা শুরু করে এবং এক সময় পিতার বাড়ি থেকে বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে চলে আসে। বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে আসার পরও স্বামী কাজ করতো। কিন্তু ৫ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১২ সালে স্বামী প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভাবের কারণে ভাল চিকিৎসা করাতে না পারায় একসময় তার স্বামী মানসিক বিকারস্ত হয়ে যায়। এ অবস্থার কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর থেকেই ৫সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের দায়িত্বভার পুরোটাই শেফালিকে নিতে হয়। 
পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য প্রথমে সে অন্যের বাড়ি কাজ করলেও সংসার যখন চলছিল না তখন সে ছেলেবেলায় পিতার বাড়ি থেকে চুল কাটার পেশা বেছে নেয়। যখন সে গ্রামের বাজারে চুল কাটতে শুরু করে তখন গ্রামের কিছু লোক তার পেশা কে ভাল চোখে দেখেনি। গ্রামে বাজারের মধ্যে মেয়ে মানুষ পুরুষ লোকের চুল কাটছে দেখে অসহযোগিতা ও হাসি-ঠাট্টা করতো। অনেকে সমালোচনাও করতো। 

আবার গ্রামের কিছু লোক শেফালির অভাব দেখে সহযোগিতাও করছে। এ সময় গ্রামের লোকজন টাকা তুলে চুল কাটার জন্য তাকে একটি চেয়ারও কিনে দিয়েছিল। কিন্তু এর পরেও সম্পদহীন জীবনে সে কোন স্বপ্ন দেখতে পারছিল না। 

জীবনের পথচলা যখন তার কাছে দূর্বিসহ, স্বপ্নগুলি যখন মরীচিকার মত ঠিক তখনই ২০১৬ সালে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া ব্র্যাক অফিসের টিইউপি কর্মসূচির আওতায় জরিপ এর মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে সে সদস্য নির্বাচিত হয় এবং তার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গবাদী প্রাণী পালন এন্টারপ্রাইজের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে একটি বকনা গরু ও একটি ছাগল প্রদান করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সহায়ক ভাতা, হোম ভিজিটের মাধ্যমে ইস্যু শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেখানো হয়। এরপর থেকে সে একটু একটু করে জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। 

শেফালির বাড়িতে এখন একটি গর্ভবতী গরু আছে যার আনুমানিক মূল্য-৪০ হাজার টাকা, তার ৩টি ছাগল ও ৩০টি হাঁস/মুরগি আছে। তার বড় মেয়েটি বি-এ (পাস কোর্স), ছেলেটি এইচএসসি আর বাকি ৩টি মেয়ে যথাক্রমে অষ্টম, সপ্তম ও প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছে। 

সে আগে অন্যের ঘরে ছিল। এখন ব্র্যাক কর্মীদের অনুরোধে বলতলা জিডিবিসি কমিটি দোগনা বাজারের পাশে ৩ কাঠা খাস জমিতে শেফালিকে একটি ঘর তুলে দিয়েছে। শেফালি এখন সামাজিক ও মানসিক ভাবে অনেক সচেতন। সে তার ছেলে-মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিবে না বলে নিজে নিজে অঙ্গীকার করেছে।

সে তার মেয়েকে বিএ পাশ করার পর চাকরী করানোর স্বপ্ন দেখছে। ব্র্যাক কর্মীরা তার সেলুনের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দিয়েছে। সে এখন গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগি-লালন-পালনের পাশাপাশি দোকানে চুল কেটে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দিয়ে সংসার এবং সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালায়। শেফালি বর্তমানে একজন জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন নারী। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এক কন্ঠ। নারী হয়েও ব্যতিক্রমী পেশা গ্রহণ করে  জীবন যুদ্ধে হার না মেনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। 

 

গো নিউজ২৪/আই

ওমেন`স কর্নার বিভাগের আরো খবর
আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

আপনার বাচ্চাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব খাবার!

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

পিরিয়ডকালীন দুর্বলতা কমাবে যেসব খাবার

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

মেয়েদের যেসব সমস্যা ক্যান্সারের লক্ষণ!

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিচ্ছে টেন মিনিট স্কুল

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

উইগুর নারীদের জরায়ুতে বিশেষ ডিভাইস বসিয়েছে চীন

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!

করোনা প্রতিরোধে হিজাব কার্যকরী, মার্কিন গবেষণা!