ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

 বিপিএলের রঙিন মঞ্চ রাঙানো কে এই আলিস? 


গো নিউজ২৪ | আব্দুস ছালাম প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম
 বিপিএলের রঙিন মঞ্চ রাঙানো কে এই আলিস? 

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গ্যালারি ছিল ভরপুর। দুই হেভিওয়েট দলের (রংপুর-ঢাকা) লড়াইয়ে মাঠের খেলাও হয়েছে জম্পেশ। এদিন সব কিছু মাড়িয়ে আলোচনায় আলিস আল ইসলাম নামে এক নবাগত ক্রিকেটার। কারণ তিনি যে নিজের অভিষেক ম্যাচেই বিপিএলের রঙিন মঞ্চ রাঙিয়েছেন। 

ঢাকা ডায়নামাইটস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচের আগে যাকে কেউ কখনও দেখেনি, ছিলেন না বিপিএল ড্রাফটে, তার পরিচয় জানেন না গণমাধ্যম কর্মীরাও।  হয়ত আপনারা বলবেন কেনো তাকে নিয়ে এতো আলোচনা? কিন্তিু তার কর্মের কারণে খোঁজ নেবে আন্তর্জাতিক মিডিয়াও। 

অচেনা-অখ্যাত এই বোলার যে একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের কীর্তি আর কারও ছিল না। না ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে, না আন্তর্জাতিক ম্যাচেও। সেই রেকর্ডটাই যে সে করেছে।  এরপর থেকে সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই আলিস? বাংলাদেশি তো?

ম্যাচের আগে সুনীল নারাইনের কাছে ঘটা করে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের টুপি পেয়েছেন। এই নারাইন তার আদর্শ বোলার। বোলিং অ্যাকশনেও ক্যারিবীয় স্পিনারের সঙ্গে অনেক মিল। রংপুর ইনিংসের সপ্তম ওভারে যখন প্রথম সাকিব আল হাসান তাকে বোলিং আক্রমণে আনলেন, তখন প্রেসবক্সে ফিসফাঁস, এই বোলারটা কে? খানিক পরে তার পরিচয়-ঠিকানা জানার আগ্রহ হলো অন্য কারণে। শুভাগত হোমের বলে মোহাম্মদ মিঠুনের দুটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করে হাসির খোরাক জোগালেন! স্নায়ুচাপ নির্ঘাত! স্নায়ুচাপে সহজ ক্যাচই জমাতে পারেননি আলিস।

সাকিব তাকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিলেন। যদিও প্রথম ওভারটা একেবারে খারাপ করেননি, দিয়েছেন ৭ রান। আলিসকে আবার আনা হলো ১৬ তম ওভারে। এসেই তাক লাগিয়ে দিলেন। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দিলেন রংপুরের সর্বোচ্চ রান করা (৮৩) রাইলি রুশোকে। গুরুত্বপূর্ণ এক ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে যদি তাক লাগিয়ে দেন, তাহলে বড় বিস্ময় তখনো বাকি। 

আলিস আল ইসলাম

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে নিজের তৃতীয় ও ইনিংসে ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ফরহাদ রেজাকে তুলে নিয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই করলেন ২৩ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার।  টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে এর আগে কেউ কখনো হ্যাটট্রিক করেননি। অভিষেকেই এমন তুলকালাম কাণ্ড ঘটালেন অচেনা আলিস ইসলাম! আর যায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়। এখানেই থামেননি, শেষ ওভারে ১৪ রানও ডিফেন্ড করেছেন। জিতিয়েছেন দলকে।

এরপর থেকেই চারদিকে আলোচনা, কে এই আলিস? কীভাবে, কোথা থেকে উঠে এসেছেন তিনি? তার ক্রিকেটীয় পরিচয় বিস্তারিত জানাতে গুগল, ক্রিকেট ওয়েবসাইট—সব ব্যর্থ! এমনকি তিনি বিপিএল ড্রফটেও ছিলেন না। ঢাকা ডায়নামাইটসে যোগ হয়েছেন বিপিএলের সপ্তাহখানেক আগে। তাহলে আলিসকে চেনার উপায়? যাওয়া হলো সাবেক দুই অধিনায়ক আকরাম খান ও খালেদ মাসুদের কাছে। তারাও তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারলেন না আলিসের পরিচয়।' প্রথম বিভাগে খেলেছে মনে হয়', শুধু এতটুকুই বলতে পারলেন।

অবশেষে সব প্রশ্নের উত্তর, সব কৌতূহল মেটালেন আলিস নিজেই। কখনো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেননি, জাতীয় লিগ-বিসিএল দূরে থাক, আজ প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামেই খেলার সুযোগ হলো তার। আর প্রথম সংবাদ সম্মেলন তো অবশ্যই। সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ভেতরে স্নায়ুচাপ কিন্তু আত্মবিশ্বাসী চেহারায় প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেন, ‘আমার নাম আলিস আল ইসলাম।’ 

জানালেন বিপিএলে আসার গল্পটাও, ‘আমি ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা প্রথম বিভাগে খেলেছি। নেটে বোলিং করার সময় সুজন স্যার (ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ) আমাকে দেখেন। দেখে তার মনে হয় যে আমি ভালো করতে পারব। তারপর আমাকে দলে নেয়। টিম ম্যানেজমেন্ট, সতীর্থরা আমাকে অনেক সমর্থন দেয়।’ 

ক্যাচ মিসের ব্যাপারেও কথা বলেন আলিস।  ‘বিপিএলে এটা আমার প্রথম ম্যাচ। খোলাসা করে বলতে গেলে স্টেডিয়ামেই এটা আমার প্রথম ম্যাচ। আমি আসলে অনেক নার্ভাস ছিলাম। তবে ক্যাচ দুটি ড্রপ করার পর সতীর্থরা অনেক সাহস দিয়েছে। কোচ সাহস দিয়েছেন। সবাই অনেক সাহস দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে যে, ভালো জায়গায় বল করতে পারলে ভালো কিছু হতে পারে। আমি শুধু ভালো জায়গায় বল করতে চেয়েছি।’

নিজের উঠে আসার গল্পটাও সংক্ষেপে জানালেন, ‘আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি কাঁঠাল বাগান গ্রিন ক্রিসেন্ট ক্লাব থেকে। তারপর কয়েক বছর সেকেন্ড ডিভিশন খেলার পর ফাস্ট ডিভিশন খেলি। তারপর এই বিপিএল।’

বেড়ে ওঠা ঢাকার খুব কাছে, সাভারের বলিয়ারপুরে। আজ সেখানে নিশ্চয়ই আনন্দের বন্যা। নিজের তৃতীয় ওভারে অমন কীর্তির পরও কিন্তু ইনিংসের শেষ ওভারে বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে। প্রথম দুই বলে চার হজম করে মুহূর্তেই খলনায়কও হতে বসেছিলেন। তবে শেষ চার বলে রংপুরকে সুবিধা করতে দেননি। আলিসের কাছে হেরে গেছে মাশরাফির দল!

শেষের ওভারের সেই স্নায়ু পরীক্ষা সম্পর্কে বললেন, ‘আসলে প্রথম দুটি বল স্ট্যাম্পের বাইরে করেছি। যেটা শফিউল ভাই ভালো জায়গায় পেয়েছে। তারপর ভাবলাম স্ট্যাম্পের মধ্যে করি। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, মনে হচ্ছিল পারব।’

আলিস

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সফল ক্যাপ্টেন মাশরাফিও তাকে প্রশংসায় ভাসালেন। বললেন, ‘সে ভালো করেছে। বৈচিত্র্য আছে ওর বোলিংয়ে। ওর জন্য ভালো হয়েছে। এত বড় মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভালো বোলিং করে ম্যাচ জিতিয়েছে। আমাদের সব তো ঠিকই ছিল। ওকে ভালোভাবে সামলেছি আমরা। আমাদের ভুলের কারণে শেষ মুহূর্তে ম্যাচটা হেরেছি। তবে কৃতিত্ব তার, সে ওই সময় নার্ভ ধরে রাখতে পেরেছে এবং ভালো বোলিং করেছে।’

সবাই আলিসকে না জানলেও, জানতেন দলের ক্যাপ্টেন।  সাকিবের ভাষায়, ‘আলিসের মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে, তা আমরা জানতাম। এটা সৌভাগ্যের শুরুতেই ও নিজের মান দেখিয়ে দিতে পেরেছে। তবে এখনো ওর অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। আজকে দুর্দান্ত খেলেছে এটা তো বলতেই হবে। অধিনায়কত্বের মজাটাই এমন। যদি আপনার দান লেগে যায়, সবাই ভাববে, বাহ দারুণ অধিনায়কত্ব। আর যদি না লাগে, আপনার সিদ্ধান্তটা বাজে দেখাবে।’

গোনিউজ২৪/এএস

খেলা বিভাগের আরো খবর
সাকিব অধ্যায়ের ইতি টেনে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক শান্ত

সাকিব অধ্যায়ের ইতি টেনে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক শান্ত

বিপিএল থেকে সরে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন মাশরাফি

বিপিএল থেকে সরে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন মাশরাফি

কী রোগে ভুগছেন সাকিব, জানালো দেশের এবং বিদেশের চিকিৎসকরা

কী রোগে ভুগছেন সাকিব, জানালো দেশের এবং বিদেশের চিকিৎসকরা

T20 World Cup 2024 : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সূচি

T20 World Cup 2024 : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পূর্ণাঙ্গ সূচি

উইজডেনের বর্ষসেরা একাদশ প্রকাশ, ভারতের জয়জয়কার

উইজডেনের বর্ষসেরা একাদশ প্রকাশ, ভারতের জয়জয়কার

১১০ রানে অলআউটের পরও দারুণ লড়াই করেই হারল বাংলাদেশ

১১০ রানে অলআউটের পরও দারুণ লড়াই করেই হারল বাংলাদেশ