বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ঘোষণার পর আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীতে আবারো শুরু হয়েছে গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’। মাত্র ৪ দিন আংশিক বন্ধ থাকার পর রাজধানীতে আবারও শুরু হলো কথিত ‘সিটিং সার্ভিস’র নামে নৈরাজ্য।
৪ এপ্রিল গণপরিবহনে ‘নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা’ ঠেকাতে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল থেকে আংশিক বন্ধ হয়। বাসগুলোতে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিতে বাধ্য করতে রোববার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেন বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু ‘জরিমানার ভয়ে’ গত ৪ দিন সড়কে অধিকাংশ বাস নামাননি মালিকপক্ষ। এতে গণপরিবহন সঙ্কটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ যাত্রী ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এবার ভাড়া কমানোর কথা বলে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হয়। কিন্তু ভাড়া কমেনি। মূলত যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য এটা মালিকদের কারসাজি।
এদিকে, চলাচলের অনুমতির (রুট পারমিট) শর্ত অনুযায়ী, কোনো কারণ ছাড়া বাস-মিনিবাস বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। সেটা করলে রুট পারমিট বাতিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আইন প্রয়োগ না করেই সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে কার্যত পিছু হটল।
গতকাল বিআরটিএ কার্যালয়ে পরিবহনমালিক, পুলিশ প্রতিনিধি ও বিআরটিএর কর্মকর্তারা বৈঠক করে ১৫ দিনের জন্য সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিস নামে চললেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না, একই সঙ্গে যানবাহনের বাম্পার, হুক এবং অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী প্রথম ৩ কিলোমিটারের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। তবে এসব বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। বাংলামোটর থেকে মালিবাগ আবুল হোটেলের দূরত্ব ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার। মোহাম্মদপুর (বসিলা)-ডেমরা রুটের স্বাধীন পরিবহনের বাসে সেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এই ভাড়ায় একজন যাত্রীর প্রায় ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার ভ্রমণ করার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না সে নিয়ম।
একই অবস্থা সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুরগামী বলাকা ‘স্পেশালের’। বৃহস্পতিবার সকালে এই বাসে মহাখালী থেকে মগবাজার আসতে তারা ভাড়া নেয় ২০ টাকা।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সিটিং সার্ভিসের একটি আলাদা কাঠামো তৈরি করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা পনেরো দিন পরে একটি বৈঠক করব। সেখানে সাংবাদিকেরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। সবাই যদি মনে করেন, সিটিং সার্ভিস হিসেবে একটি আলাদা কাঠামো দাঁড় করানো যায়, তাহলে তা করা হবে। সিটিং সার্ভিসকে একটা আইনের মধ্যে আনতে চাই।’
গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিটিং সার্ভিস বন্ধ এবং গত পাঁচ দিনের অভিযান পর্যালোচনার জন্য বুধবার (গতকাল) বৈঠক হবে বলে জানিয়েছিলেন। ওই দিন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা কি আমাদের দেশের বাস্তবতায় জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী।’
ঢাকাসহ সারা দেশের মালিক সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিগণ। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতা খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ। দেশের পরিবহনশ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
গো নিউজ২৪/এএইচ