তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সারা দুনিয়ার সকল তথ্য এখন মানুষের হাতের মুঠোয় এসে পড়েছে। এটা মানুষের অসংখ্য কল্যাণে আসলেও এর কিছু খারাপ প্রভাব সমাজের যুবক-যুবতীদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে উঠা। এটা তরুণ সমাজের শুধু ক্ষতিই করছে না তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। এটা এতটাই ভয়ানক যে, একটা ছেলে কিংবা মেয়ের নৈতিক অবনতি থেকে শুরু করে পারবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বড় কারণের মধ্যে একটি। তাই এই নোংরা কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা একজনন মানুষ হিসেবে অত্যাবশ্যক।
আর এরই প্রেক্ষিতে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়া ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু উপদেশঃ
১. নিজেকে মানুষ হিসেবে কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়, তা নিয়ে ভাবুন।
২. নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ অর্থাৎ মুসলিম হিসেবে চিন্তা করুন।
৩. একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা’আলা কে সর্বোচ্চ ভয় করুন।
৪. আল্লাহর ভয়কে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে রাসূল (সা) এর সুন্নাহ অনুসরণ করুন।
৫. ভালো-মন্দ হিসেব করতে ইসলামকে সামনে আনুন।
৬.দ্বীনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য দেখে বন্ধু নির্বাচন করুন।
৭. অবসর সময়ে একাকী না থেকে (দ্বীনি) বন্ধুদের সাথে থাকুন।
৮. পবিত্রতার সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা’তে আদায় করুন এবং ঘরে নফল সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ুন।
৯. পরিবারের মানুষের সাথে লজ্জাশীলতা বজায় রাখুন ।১০. যেকোন মেয়ে থেকে নিজের
চোখকে হেফাজত করুন।
১১. বিয়ের ইচ্ছে জাগলে (সামর্থ্যবান হলে) বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের বলুন এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন।
১২. বিয়ের পর নিজ স্ত্রীর উপর সন্তুষ্ট থাকুন। স্ত্রী সুন্দর না হলে আখিরাতে এর উত্তম প্রতিদান পাওয়ার আশা করুন।
১৩.বাসায় টিভি, ভিসিআর থাকলে সবাই যাতায়াত করে এবং বসে এমন রূমে রাখুন।
১৪. মন খারাপ লাগলে বিভিন্ন কারীদের কুরআন তিলাওয়াত শুনুন।
১৫. বিভিন্ন স্কলারদের ইসলামিক চিন্তাভাবনা পড়ুন।
১৬. বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে চিন্তা করুন। তাদের সাহায্য করতে পরিকল্পনা করুন।
১৭. বিভিন্ন ইসলামিক কাজে নিজেকে জড়িত করুন এবং আগ্রহের সাথে কাজ করুন।
১৮. কোন খারাপ চিন্তা মাথায় আসলে, সাথে সাথে আল্লাহর নিকট তাওবা করুন।
১৯. নিজেকে একজন যৌনকর্মী থেকে পৃথকভাবে ভাবতে শিখুন এবং এসব আচরণকে মন থেকে ঘৃণা করুন।
২০. ‘আপনার প্রতিটি (ভালো/মন্দ) কর্ম আল্লাহ দেখছেন এবং দু’জন ফেরেস্তা তা লিখে রাখছেন’ – বিষয়টি মাথায় রাখুন এবং জাহান্নামের শাস্তিকে ভয় করুন। সৎকর্ম ও
আল্লাহ্ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (সুরা আল মায়েদা ২)
তাওবা কিভাবে করতে হবে
তওবা করার জন্য জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ তাআ’লা সেই তওবা কবুল করবেন।
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো – এ রকম হলে তওবা হবে না।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) + “তওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৫. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, তোওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৬. অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম – অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তওবা কবুল করবেন।
৭. তোওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. যে পাপ কাজ থেকে তোওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তোওবা করে সেটা থেকে ফিরে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তওবা করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত।
গো নিউজ২৪/এবি