ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আরো এক তরুণীর সৌদি থেকে পালানোর গল্প


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০১৯, ০৪:৪৯ পিএম আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম
আরো এক তরুণীর সৌদি থেকে পালানোর গল্প

আঠারো বছর বয়সী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন গত সপ্তাহে ব্যাংকক বিমানবন্দরের হোটেল কক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ করেন এবং আর বাড়ি ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন। এ ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্কের সূচনা করেন তিনি। এটা এমনই এক নাটকীয় ঘটনা যার মধ্য দিয়ে সৌদি আরবে নারীদের সমস্যার ওপর নতুন করে বিশ্বের নজর পড়েছে। 

জন্মভূমি সৌদি আরব থেকে পালানো এই নারীকে ঘিরে টুইটারে তীব্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর কানাডার সরকার রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুনকে আশ্রয় দিয়েছে। 

রক্ষণশীল দেশটিতে নারীদের অধিকার এবং মর্যাদা নিয়ে বিতর্ক যখন চলছে, তখন রাহাফ আল-কুনুনের মতো আরও এক তরুণী এর আগে দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ওই তরুণীর নাম সালওয়া। চব্বিশ-বছর বয়সী এই তরুণী তার এক বোনকে নিয়ে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যান।

নিজ দেশ ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছিলেন সালওয়া ও তার বোন, তার নিজের বর্ণনায় সেটি তুলে ধরা হলো-

ছয় বছর ধরে আমরা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু এটা করতে হলে আমাদের পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন ছিল। এই কাগজগুলো জোগাড় করতে হলে আমার অভিভাবকের সম্মতি লাগতো। (সৌদি আরবে নারীদের বহু কিছু পেতে হলে পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হয়)।

সৌভাগ্যক্রমে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলাম তখন আমার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছিল। আমার একটি পাসপোর্টও ছিল। কারণ একটি ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার জন্য পাসপোর্টের দরকার ছিল। কিন্তু আমার পরিবার এগুলো আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল।

সম্প্রতি সৌদি পালানো রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন

তাই যে কোনো উপায়ে আমার ওই কাগজগুলো জোগাড় করা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই আমি আমার ভাইয়ের বাড়ির চাবি চুরি করি। এরপর চাবি তৈরির দোকানে গিয়ে সেগুলোর নকল তৈরি করি। এরপর আমি লুকিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। কাজটা ছিল খুবই বিপজ্জনক। ধরা পড়লে সমূহ বিপদ ছিল।

এভাবে নকল চাবি হাতে আসার পর আমার এবং আমার বোনের পাসপোর্ট দুটি আমার হাতে চলে আসে। একদিন আমার বাবা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন আমি তার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করি এবং সেখানকার রেজিস্টার্ড ফোন নম্বরটি বদলে আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেই। তার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই আমি দেশ ত্যাগের জন্য আমার বাবার অনুমতিপত্র জোগাড় করি।

যেভাবে দেশ ছেড়েছিলাম:

একরাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন আমরা দুই বোন গোপনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমরা গাড়ি চালাতে জানি না। সেজন্য ট্যাক্সি ডাকি। ঘটনাচক্রে সৌদি আরবে বেশিরভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভার হলেন বিদেশি।

ফলে দুজন নারী নিজেরাই বিমানবন্দরে যাচ্ছেন, এটা নিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারের মনে কোন প্রশ্নের উদয় হয়নি। আমরা রিয়াদে বাদশাহ খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলাম। কেউ যদি এটা লক্ষ্য করতো এবং যদি আমরা ধরা পড়তাম, তাহলে নির্ঘাত আমাদের মৃত্যু হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরটিতে আমি এক হাসপাতালে কাজ করে যে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। তা দিয়েই আমরা বিমানের টিকেট এবং জার্মানিতে ট্রানজিট ভিসা জোগাড় করি। সৌদি বেকার ভাতার কিছু অর্থও আমি জমিয়ে রেখেছিলাম।

যাহোক, আমার বোনকে সাথে নিয়ে আমি জার্মানগামী বিমানে উঠে বসি। এটা ছিল আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ। সেই অভিজ্ঞতা ছিল অনন্য। একদিকে যেমন খুশি ছিলাম, অন্যদিকে বেশ ভয়ও লাগছিল।

বাড়ির সবাই সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখলো আমরা দু'বোন বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি তখন আমার বাবা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু যেহেতু আমি বাবার ফোন নম্বর বদলে দিয়েছিলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যখনই বাবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল, সেই কলগুলো আমার ফোনে বেজে উঠছিল। জার্মানিতে বিমান থেকে নামার পরও আমি তাদের কাছ থেকে টেক্সট মেসেজ পাচ্ছিলাম। 

জার্মানিতে পৌঁছানোর পর আমি লিগ্যাল এইড গ্রহণ করলাম এবং একজন আইনজীবী খুঁজে বের করলাম, যিনি আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে সাহায্য করবে। তার সাহায্যে আমি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করি।

কানাডাকে আমি বেছে নিয়েছিলাম তার কারণ দেশটির মানবাধিকার রক্ষার রেকর্ড খুবই ভালো। সিরিয়ার শরণার্থীদের যেভাবে কানাডা আশ্রয় দিয়েছিল, সেই খবর আমি আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম। তাই আমি ভাবলাম কানাডাই হবে আমার থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা। আমার আবেদনপত্র গৃহীত হওয়ার পর আমি জার্মানি থেকে কানাডার শহর টরন্টোতে চলে আসি।

যেদিন টরন্টোতে এসে নামলাম, বিমানবন্দরে কানাডার পতাকা দেখে মনটা ভরে গেল। এখন আমি আমার বোনকে নিয়ে মন্ট্রিয়াল শহরে থাকি।

এখানে আমার জীবনে কোনো শঙ্কা নেই। কোনো কিছুর জন্য কেউ আমাকে আর চাপ দেয় না।

সৌদি আরবে টাকা-পয়সা হয়তো অনেক বেশি, কিন্তু সেখানে ব্যক্তি-স্বাধীনতা নেই। কিন্তু এখানে রয়েছে ব্যক্তি স্বাধীনতা। আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আমি যখন খুশি বাইরে যেতে পারি। কারও অনুমতি লাগে না। এখানকার জীবন নিয়ে আমি সত্যি খুব খুশি।

এখানকার প্রকৃতিতে হেমন্তের দৃশ্য আর বরফ পড়া দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। আমি এখন ফরাসি ভাষা শিখছি, সাইকেল চালানো শিখছি, সাঁতারকাটা শিখছি। আইস স্কেটিং শিখছি। আমার মনে হচ্ছে জীবনটাকে নিয়ে সত্যি ভাল কিছু করছি। আমার পরিবারের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার মনে হয় একদিক থেকে সেটা দু'পক্ষের জন্যই ভালো হয়েছে। এখন আমার বাড়িঘর এখানেই। এই জীবনই আমার জন্য ভালো।

সারওয়া জানান, সৌদি নারীরা সমানাধিকারের জন্য লড়াই করছেন বহু দিন ধরে। সৌদি আরবে আমাদের যেটা ছিল তাকে ঠিক জীবন বলা চলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে আমি বাড়িতে বসে থাকতাম। সারাদিন কিছুই করার ছিল না। এটা আমাকে খুব কষ্ট দিতো। রমজান মাস এলে আমাকে রোজা রাখার জন্য জোরজবরদস্তি করা হতো। আমাদের শেখানো হয়েছিল পুরুষরা মেয়েদের চেয়ে সব দিকে থেকে ভালো।

গো নিউজ২৪/আই

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও