ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুরে দশ দিনে ১৩ জনের মৃত্যু


গো নিউজ২৪ | ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০১৮, ১০:৪২ এএম
আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুরে দশ দিনে ১৩ জনের মৃত্যু

এবার উত্তরের রংপুর অঞ্চলে পড়েছে রেকর্ড ভাঙা শীত। হাঁড় কাপানো শীতের তীব্রতা থেকে একটুখানি উষ্ণতার আশায় আগুনে পোহানোর সময় রংপুর বিভাগের কোন না কোন জেলায় প্রায়ই ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনা। এতে অনেকে পুড়ছে এবং মরছে। আর দিন দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট ভারি হচ্ছে আগুনে পোড়া মানুষের আহাজারিতে। গত দশ দিনে রমেকের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

গতকাল সোমবার ১৫ জানুয়ারী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী মারা গেছেন। এর আগের দিন রবিবার রাত আটটায় দুই জন এবং শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে আরো তিন নারীর মৃত্যু হয়। কয়েকদিন আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দশ দিনে সেখানে মৃত্যু হলো ১৩ নারীর। 

নিহতরা হলেন- রংপুর বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার সদর থানার শাম্মি আখতার (২৭), একই জেলার পাটগ্রামের ফাতেমা বেগম (৩২) ও আলো বেগম (২২), রংপুরের কাউনিয়ার গোলাপি বেগম (৩০), নীলফামারীর রেহেনা বেগম (২৫), রংপুর নগরীর নজিবেরহাট এলাকার বেলাল হোসেনের স্ত্রী আফরোজা খাতুন (৪০), ঠাকুরগাঁও শহরের থানাপাড়ার আঁখি আক্তার (৪৫), রংপুরের জুম্মাপাড়া পাকার মাথার রুমা খাতুন (৬৫), রংপুর মাহিগঞ্জের চাঁন মিয়ার স্ত্রী মনি বেগম (২৫), নীলফামারী সদরের সোনারাম গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী মারুফা খাতুন (৩০), লালমনিরহাট জেলার রাজপুর গ্রামের শুকমনি (৭০), রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার জামেরন বেওয়া (৮০) ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার হাসু বেগম (৬৫)।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাস্টিক ইউনিটের সহকারী পরিচালক নূরে আলম জানান, ‘দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৫৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।  এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর, এদের শরীরের ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আর ৫৫ জনের শরীরের প্রায় ৩০ থেকে ৫৫ শতাংশ পুড়েছে।’ এসময় তিনি বলেন, বার্ণ ইউনিটে দগ্ধ হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর বেশির ভাগই নারী, বৃদ্ধ ও শিশু।

অন্যদিকে ওই বিভাগের রেজিষ্ট্রার ডা. তউহিদ আলম জানান, এবারের শীতে ৬০ জনের নারী ও শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গতকাল রোববার রাতে চিকিৎসাধীন ৩ জন এবং আজ সোমবার সকালে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে আরো অগ্নিদগ্ধ ৯ জনের মারা যান।  এছাড়াও আরো ১০ জনের অবস্থা আশংকা জনক।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, রমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে সক্ষমতার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই জায়গার অভাবে হাসপাতালের মেঝেতেই ঠাঁই নিয়েছেন। ওই রেজিস্ট্রার ডা. তউহিদ আলম জানান, দগ্ধ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষায়িত এই বার্ণ ইউনিট। যার শয্যা সংখ্যা মাত্র ১৩। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে গড় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৮তে ঠেকেছে। 

এদিকে জন্মেই শীতের ত্রাসে পড়া ৪০ দিন না পেরুনো শিশুটিকে কোলে করে আগুনের কুন্ডলীর কাছে গিয়েছিলেন মা সুমি। বেখেয়ালে সে আগুন তার পড়নের কাপড়ে ধরে যায়। বুঝে ওঠার আগেই পুড়ে যান নিজে, পুড়ে যায় কোলে থাকা নবজাতক শিশুটি। বর্তমানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এই নারী। 

দগ্ধ সুমি বেগম বলেন, তীব্র ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে ১ মাস ৭ দিনের নবজাতককে কোলে নিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। অসাবধানবশত আগুন তার কাপড়ে ধরে যায়। দ্রুত তিনি আগুন থেকে বাঁচাতে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নবজাতকের খুব বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তার নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ছয় বছর বয়সী জান্নাতী খাতুন। যার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে আগুনে। জান্নাতীর বাবা সোহেল রানা বলেন, ঠান্ডা থেকে বাঁচতে খড়ের আগুনে তাপ পোহাচ্ছিল সে। হঠাৎ জান্নাতীর শরীরের কাপড়ের নিচে আগুন ধরে যায়। প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন সে বুঝতে পারে ততক্ষণে তার শরীরের উপরের দিকে আগুন ধরে যায়।

এরকম অনেক দগ্ধ নারী, বৃদ্ধ ও শিশু রোগী পর্যাপ্ত শীত বস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করতে গিয়ে অসাবধানতায় এই দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

অন্যদিকে বার্ণ ইউনিটে স্বল্প-জনবল আর বিভাগীয় প্রধানের ছুটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা পেতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দগ্ধ রোগীদের। এমন পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিমে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ফোরকান আলী বলেন, 'আমাদের সকল ডিউটির পরেও আরো একজনকে ডেকে এনে ড্রেসিং এর ব্যবস্থা করেছি। আর বিভাগীয় প্রধান ছুটিতে ভারতে গেছেন। এতে একটু সমস্যা হচ্ছে।' 

গো নিউজ২৪/এবি

দেশজুড়ে বিভাগের আরো খবর
মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোটি টাকা নিয়ে পালালো ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

দিনের শুরুতেই বিআরটিসি বাসের চাপায় নিহত ৪ 

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

ধারের টাকা দিতে না পারায় বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

বোমাটি বিস্ফোরিত হলে বাসের সবাই মারা যেতেন

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা, হাতেনাতে আটক ৩

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা

হাতকড়া পরা অবস্থায় বাবার জানাজায় বিএনপি নেতা