ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেনু পোনা নিধনে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ


গো নিউজ২৪ | সোহাগ হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০১৭, ০১:১২ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০১৭, ০৭:১২ এএম
রেনু পোনা নিধনে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

পটুয়াখালীর দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের নদী ও সাগর মোহনায় চলছে রেনু পোনা নিধনের মহোৎসব। জেলার গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার নদীর কোলঘেঁষে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক জেলে রেণু পোনা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। মার্চের শুরুতেই মৌসুম শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হয়। দুই উপজেলায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন নদীতে অবাধে সুক্ষ্ম ফাঁসের মশারি নেট, বিহন্তী, কারেন্ট জাল ও বক্স আকৃতির বিভিন্ন জাল পেতে পোনা রেনু মাছ নিধনের এমন ভয়াবহ চাল-চিত্র দেখা গেছে। 

মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ অনেকের নাকের ডগায় অসাধু ব্যবসায়ীচক্রের এমন অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘ্নে চললেও যেন কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, থানা পুলিশ ও কতিপয় নামধারী সাংবাদিকদের যোগসাজসে দেদার চলছে অবৈধ রেনু পোনার বাণিজ্য। 

জেলার গলাচিপা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও রাঙ্গাবালীতে ৫টি ইউনিয়নসহ উপকূলীয় নদী ও সাগরবক্ষে এক হাজার পয়েন্টে দৈনিক গড়ে কোটি পোনা নিধন হলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার যেন কেউ নেই। এসব পোনা আবার প্রকাশ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারের আড়তে পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় চলছে। গলাচিপা পৌর শহরে স্বপন হাং, হেলাল উদ্দিন, চান মিয়া, আমিরুল প্যাদা, রহিম মিয়া, স্বপন বিশ্বাস, বোয়ালীয়ার বাজারে আলাউদ্দিন গাজাী, গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, নয়া মিয়া, আমিরুল মুন্সি, মামুন মোল্লা, পানপট্টিতে আলাউদ্দিন, আবু সাইদ , সোহাগ-১ ও সোহাগ-২সহ আরো অনেকে এ অবৈধ রেনু ব্যবসা করছেন। নির্দিষ্ট  আড়তদারদের মাধ্যমে অধিক লাভের আশায় সংগৃহীত রেনু পোনা পাঠানো হয় বৃহত্তর খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এ রেনু পোনার চালান দিনের বেলায় তেমন একটা পরিবহন না করা হলেও রাতের বেলায় পানপট্টি হয়ে গলাচিপা খেয়াঘাটের হরিদেরপুর , বদনাতলী হয়ে গলাচিপা খেয়াঘাটের হরিদেরপুর স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। জানা গেছে এ রুট চলাচলে সহজ নিরাপদ হওয়ায় ভোলার পোনা ব্যবসায়ীরা পোনা চালান দিয়ে থাকে।

এ দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বোয়ালীয়ার জেলে স্বপন(১৭) , রহিম (৪৫) তারা জানান, রেনু পোনা শত প্রতি ১৫০ থেকে২৫০টাকা বিক্রি করে পেয়ে থাকি। অনেক সময় দাম উঠা নামা করে। তাদের গদিতে রেনু পোনা গুনে গুনে  দিতে হয়। এ রকম শত শত জেলে রেনু পোনা প্রতিদিনই ধরছে। গরীবরাই এ পোনা বেশী ধরছে। উপকূলের এক শ্রেনীর লোক মাছ শিকার নামে মশারি, কারেন্ট, বেন্থিজাল সহ বিভিন্ন প্রকারের জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে ছোট মাছ। ফলে উপকুলীয় অঞ্চল হারাচ্ছে মাছের বিশাল ভান্ডার। রেনু পোনা আহরণের ফলে ছোট মাছের সাথে অন্তত ৩৩৫ প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্র প্রকাশ করেছেন। সাগর কিংবা নদীর বাঁকে বাঁকে মশারী নেট পেতে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন এ দুই উপজেলায় অহরহ। যে যেভাবে পারছে কৌশলে লাভবান হচ্ছে। অথচ দেশ হারাচ্ছে মাছের বিশাল ভান্ডার। 

জানা গেছে, রেনু সংগ্রহকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে সাগর পাড়ের ৭শত বর্গকিলোমিটার তীরবর্তী জেলে পল্লির অধিকাংশ জেলে। তারা সবই এ পেশাকে ধারণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। মুলধন কম লাগায় জেলে পল্লির শিশু থেকে শুরু করে যুবক, নারী ও বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রাই সকলই ক্রমশই ধাবিত হচ্ছেন এ পেশায়। রেনু পোনা বিক্রি করে অনেক দরিদ্র জেলেপরিবারগুলোতে এসেছে স্বচ্ছলতা।

স্থানীয় লোক সূত্রে জানা যায়, রেনু নিধনের ব্যাপারে নাম মাত্র অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তারা  (জেলে) মৎস্য বিভাগ ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে খুশি রেখেই রেনু নিধন করায় অভিযোগ রয়েছে জনশ্রুতিতে। এদিকে মৎস্য  বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা নদীতে টহল দিলেও রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে রেনু নিধন। রেনু পোনা শিকার করায় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে । অন্যান্য প্রজাতির কোটি কোটি পোনা, রেনু ডিম এবং খাদ্যকনা ধ্বংস হলেও তা অনেকেই বিবেচনায় আনছেন না। অথচ মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনায় ২০০১সালের ২১সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় গলদা ও পোনাসহ সব ধরনের পোনা আহরন নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।

পানপট্টি ইউনিয়নের এক জেলে বলেন, একজন জেলে দৈনিক ১০০-১৫০ রেনু পোনা সংগ্রহ করতে পারে। অধিক আয়ের আশায় অধিকাংশ জেলের তাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দিয়ে রেনু পোনা সংগ্রহ করাচ্ছে। এখন ৪-৫জন সদস্যের পরিবারের সবাই রেনু পোনা সংগ্রহ করে তাদের দৈনিক আয় হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। একাধিক জেলেরা জানান, গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত গলদা রেনু ৩-৪ হাত বদল হয়ে পৌছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। রেনু পোনা পাওয়ার লক্ষ্যে এ অঞ্চলে জেলেদের আগাম দাদন দেয় দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়ত মালিকরা। 

এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশের সামুদ্রিক সম্পদ এক সময় হুমকির সম্মুখিন হবে। রেনুর সাথে অন্যান্য মাছ দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বোয়ালীয়ার আলাউদ্দিন গাজী জানান, ব্যবসা করি টাকা দিয়ে সকলকে টাকা দিতে হয়, উপজেলা মৎস অফিসারকে দুই লক্ষ দিতে হয়েছে থানায় ক্যাশিয়ারকে পরিবহনের সময় পাতিল প্রতি ৩০০টাকা হারে দিতে হয়েছে আর হলুদ সাংবাদিকতার জন্য এ বার বরাদ্ধ রাখা হয়েছে বলে এ ব্যবসায়ী উল্টো অভিযোগ করে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবু অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এ মৌসুমে অভিযান চালিয়ে ২৮লক্ষ পোনা নদীতে ফেলা হয়েছে। আর বদলী জনিত কারনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার না থাকায় জেলেদের জেল ও জরিমানা করা সম্ভব নয়। তবে এ মৌসুমে তিনি দুই লক্ষ টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিচ্ছেন বলে প্রশ্ন করা হলে তিনি অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে মুঠোফোনটি কেটে দেন।


গো নিউজ২৪/এএইচ

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

১৪ বছর আগে একীভূত হয়েও এখনো ধুঁকছে যে ব্যাংক

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

রেড জোনে থাকা ‘বেসিক ব্যাংক’ যাবে কার সঙ্গে?

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিদেশি ঋণ, পরিশোধ হবে যেভাবে

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?