ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌনতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘উপহার’ দেয়া হয় কিশোরী মেয়ে


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০১৭, ০২:২৫ পিএম আপডেট: জুলাই ২৩, ২০১৭, ০৮:২৫ এএম
যৌনতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘উপহার’ দেয়া হয় কিশোরী মেয়ে

থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত প্রদেশ মায়ে হং সন সফরে গেলে ঊর্ধ্বতন আমলাদের বরাবর একই রীতিতে আপ্যায়ন করেন সরকারি কর্মকর্তা বুনিয়ারিত নাইপাওয়ানি। তিনি তাদের সবচেয়ে ভালো খাবার ও পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এরপরই আমলাদের জন্য সেখানে নিয়ে আসা হয় কিশোরী মেয়েদের। এই কিশোরীদের আখ্যায়িত করা হয় ‘ফলাহার’ হিসেবে।

ভদ্র ভাষায় বলতে গেলে, থাইল্যান্ডের এই ঐতিহ্যকে প্রকাশ করা হয় এভাবে: ‘খাবার খাওয়ার জন্য মাদুর বিছিয়ে দাও’। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন শেষে যৌনতার জন্য ওই কিশোরীদের দেয়া হয় তাদের কাছে। এই বিষয়টি বোঝাতেই ওই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়।

থাই ঐতিহ্যের এই কুপ্রথাটি প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টি সেখানে সবারই জানা ছিল। তবে এ নিয়ে আলোচনা হতো খুব কমই। কিশোরী মেয়েদের পাচারে পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশিত হলে দেশটির এই নির্মম ঐতিহ্যটি আলোচনায় আসে। এই সংস্কৃতি বিনাশের দাবি ওঠে।

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত পার্বত্য প্রদেশ মায়ে অং সনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা বুনিয়ারিত নাইপাওয়ানি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই এ ঐতিহ্য চালু রয়েছে। যখনই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দল সেমিনার বা কাজের জন্য এখানে আসেন, তখন তাদের আপ্যায়নের একটি প্রথা রয়েছে। মানে, তাদের ভালো খাবার খাওয়ানোর পর ‘মাদুর বিছিয়ে দাও’- অর্থাৎ, তাদের জন্য মেয়ে সরবরাহ করো।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কী ধরনের মেয়ে পছন্দ করেন, কখনও কখনও সে ব্যাপারে আগে থেকেই আমরা তথ্য পেতাম। কখনও কখনও কর্মকর্তাদের জন্য ৫ থেকে ১০ জন মেয়েকে আনা হতো, সেখান থেকে বেছে নিতেন।’

বুনিয়ারিত এই চর্চার বিষয়ে এখন খোলামেলা কথা বলতে পারছেন। এর আগে তিনি তা বলতে পারতেন না। ওইসব মেয়েকে নিয়ে আসা হয় বিভিন্ন যৌনপল্লি থেকে। মায়ে অং সন প্রদেশে যৌনপল্লির নেটওয়ার্কগুলো পুলিশ-পরিচালিত বলে অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দারা এ অভিযোগের ৪১টি মামলার তদন্ত করছে।

সম্প্রতি পাচারের শিকার এক কিশোরীর মা ব্যাংককে পালিয়ে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে এবং অন্য তিন কিশোরীকে প্রতারণার মাধ্যমে যৌনকর্মী বানানো হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশের সঙ্গে যৌনকর্মে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে। ওই নারী এ ঘটনা ফাঁস করার পরই গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেন।

ওই নারী ঘটনাটি ফাঁস করার পর গণমাধ্যমের চাপের মুখে মেয়েদের পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির জাতীয় পুলিশ মায়ে অং সনের পুলিশ সার্জেন্টকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি অন্য আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এছাড়া মায়ে অং সনে সরকারি পরিদর্শনের সময় সরকারি তহবিল ব্যবহার করে মেয়েদের ভাড়া করে আনার অভিযোগে ননথাবুড়ি প্রদেশের পাঁচ প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মায়ে অং সনের কর্মকর্তা বুনিয়ারিত নিপাভানিত বলেন, ‘ওই ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর আঞ্চলিক অনেক কর্মকর্তা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন এই ভেবে যে তাদের আর এসব কাজ করতে হবে না।’

তবে এই ঐতিহ্যটি শুধু মায়ে অং সনেই চালু নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সংস্কৃতি থাইল্যান্ডজুড়েই বিস্তৃত। এখানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই অধস্তনেরা চাকরি ধরে রাখার জন্য বা পদোন্নতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোষামোদ করে থাকেন। কলাম লেখিকা লাখানা পানউইচাই বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্রে মেধার কোনো স্থান নেই। আমাদের বসদের ঘুষ দিতে হয়।’

লাখানা পানউইচাই বলেন, এই সংস্কৃতিতে মেয়েদের পণ্য হিসেবে দেখা হয়, মানুষ হিসেবে নয়। আর এই মানসিকতা থেকেই ঊর্ধ্বতনদের যৌনতার ব্যবস্থা করে দেয়া চর্চার উৎপত্তি। তিনি বলেন, ‘মেয়েরা এখানে সুন্দর পোশাক বা খাবারে মতো।’

প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যৌন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করায় পাচারের শিকার হওয়া মেয়ে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। বিশেষ করে মায়ে অং সনের মতো এলাকা, যেখানে সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা খুবই সংকীর্ণ, সেখানে এসব পরিবার মুখ খোলার সাহস পায় না। নিজেদের রক্ষা করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষও থাকে চাপের মুখে।

মায়ে অং সন থেকে পালিয়ে ব্যাংককে গিয়ে গোপন তথ্য ফাঁস করা ওই মায়ের অভিযোগগুলোকেও প্রাথমিকভাবে কবর দেয়ার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। ওই নারী বর্তমানে ব্যাংককে সরকারি নিরাপত্তায় রয়েছেন। তার আইনজীবী এএফপিকে জানিয়েছেন, স্থানীয় কয়েকজন পুলিশ ওই নারীকে বিষয়টি মীমাংসা করে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

মা অং সনের ওই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে থাইল্যান্ডের সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, তারা ‘খাবারের জন্য মাদুর বিছিয়ে দাও’ চর্চার বিরুদ্ধে কাজ করে যাবে। দেশটির মানব পাচারবিরোধী পুলিশও যৌন ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেখানে যৌন ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় সীমিত আকারে। নারী পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রনাসিত রোয়েকসায়াজিউয়া বলেন, ‘পুলিশ কোনও যৌনকর্মীকে উদ্ধারের পর কখনোই ঘটনাটি আর বাড়তে দেয় না। যৌনকর্মীদের খদ্দের কারা, সে বিষয়ে তারা কখনোই বিস্তারিত তদন্ত করে না।’

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও