ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়া পুরুষের সঙ্গে কিশোরীদের যৌনমিলনের অদ্ভুত প্রথা


গো নিউজ২৪ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৭, ০৩:৩৫ পিএম আপডেট: জুন ১৯, ২০১৭, ০৯:৩৬ এএম
ভাড়া পুরুষের সঙ্গে কিশোরীদের যৌনমিলনের অদ্ভুত প্রথা

আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বঞ্চলীয় দেশ মালাবিতে রয়েছে নানা রকমের অদ্ভুত সব প্রথা। এর মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভূত প্রথাটি দেখা যায় মালাবির দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রামগুলোতে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে পা রাখলেই এখানকার মেয়েদের একজন পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনে আবদ্ধ হতে হয়। বিনিময়ে আবার সেই পুরুষকে পরিশোধ করতে হয় নির্দিষ্ট অর্থ। ধর্ষণ তো নয়ই, এটা এখানকার গ্রামগুলোর এক ধরনের ঐতিহ্য, ধর্মীয় রেওয়াজ। তবে যেকোনো পুরুষের সঙ্গে নয়, এজন্য নির্দিষ্ট করা লোক আছে। স্থানীয় ভাষায় এদের বলা হয়, ‘হায়েনা’।

এসব হায়েনার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে যৌনতাবাহিত নানা রোগও। মালাবির দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নাসানজে গিয়ে দেখা গেল এমনই একজন হায়েনাকে। তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ির উঠোনে বসে আছেন এরিক আনিভা। এই গ্রামের বিশিষ্ট হায়েনা তিনি। এলাকার কোনো মেয়ের প্রথমবার ঋতুস্রাব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যৌনমিলনের জন্য ভাড়া করে নেয়া হয় তাকে। কোনো নারীর স্বামী মারা গেলেও মৃতদেহ সমাধিস্থ করার আগে ওই নারীকে একবার যৌনমিলন করতে হয় আনিভার সঙ্গে। এমনকি যৌনমিলনে ওই নারী গর্ভবতী হলেও।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হচ্ছে, কোনো মেয়ের প্রথমবার মাসিক হওয়ার পর শিশু থেকে তার নারীত্বে উত্তরণের প্রমাণ হিসেবে পরপর তিনদিন যৌনমিলন করতে হয় হায়েনাদের সঙ্গে। কোনো মেয়ে এতে অস্বীকার করলে ধরে নেয়া হয়, ওই মেয়ের পরিবার বা গ্রামের জন্য বড় ধরনের কোনো রোগ অথবা বিপদজ্জনক কিছু অপেক্ষা করছে। এটাকে বলা হয়, মেয়েদের ‘সূচিকরণ’। তাদের ধারণা, এর মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ হয় কিশোরীরা।

হায়েনাদের সঙ্গে যৌনমিলনের দুই ধরনের পদ্ধতি আছে। একটিকে বলা হয় ‘কুসাসা ফুম্বি’। প্রথমবার মাসিক হওয়ার সময় কিশোরীদের সঙ্গে যে যৌনমিলন, তাকে বলা হয় কুসাসা ফুম্বি। আর দ্বিতীয় পদ্ধতির নাম ‘কুলোয়া কুফা’। কোনও নারীর স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করার আগে বিধবাকে ‘পরিশুদ্ধ’ করতে তাদের সঙ্গে যে যৌনমিলন, তাকে বলা হয় কুলোয়া কুফা।

এরিক আনিভা

আনিভা বলেন, ‘আমি যাদের সঙ্গে যৌনমিলন করেছি তাদের প্রায় সবাই ছোট ছোট মেয়ে। স্কুলে যাওয়া মেয়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো কোনো মেয়ের বয়স ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে হবে। কিন্তু তাদের আমার ভালো লেগেছে। সব মেয়েই আমাকে তাদের হায়েনা হিসেবে পেয়ে আনন্দিত বোধ করে। তারা এর জন্য গর্ব বোধ করে। মেয়েরা অন্যদের বলে, এই হচ্ছে প্রকৃত পুরুষ। সে জানে, কীভাবে একজন নারীকে আনন্দ দিতে হয়।’

তবে এ রকম গর্ব করে তিনি নিজের কর্মকাণ্ড জানালেও অনেক মেয়েই জানায়, তারা নিতান্তই অনিচ্ছায় তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মারিয়া নামের এক মেয়ে বলে, ‘এটা করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। আমার মা-বাবার কথা ভেবেই আমাকে এটা করতে হয়েছে। যদি আমি এটা অস্বীকার করতাম তবে আমার পরিবারের ওপর আক্রমণ করা হতো।’

আনিভার বর্তমান বয়স চল্লিশের ওপর। দুটি স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান আছে তার। এ পর্যন্ত ১০৪ জন নারীর সঙ্গে যৌনমিলন করেছেন বলে দাবি আনিভার। ২০১২ সালে এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় একবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কিছুদিনের জন্য আনিভার চাহিদা কমে যায়। কতজন নারীকে তিনি গর্ভবতী করেছেন, তার কোনো সঠিক হিসাব দিতে পারেননি এই হায়েনা।

তিনি জানান, তাদের এলাকায় তার মতো মোট ১০ জন হায়েনা আছে। প্রতিবার যৌনমিলনের জন্য তাদের চার থেকে সাত ডলারের মধ্যে প্রদান করা হয়। তবে শুধু যৌনমিলনটাই পুরো প্রক্রিয়া নয়। এটা একটা প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ। প্রথমে মাঝবয়সী কিছু নারী সদ্য বয়োঃসন্ধি পেরোনো মেয়েদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যান। কীভাবে একজন পুরুষকে যৌন আনন্দ দিতে হয় সেখানে মেয়েদের তা শেখানো হয়। প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে মেয়েদের একজন হায়েনার সঙ্গে যৌনমিলন করতে দেয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়ার আয়োজন করে মেয়েটির পরিবার।

আনিভার পরিবার

গর্ভধারণ এড়াতেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এমনকি রোগের সংক্রমণ এড়ানোরও থাকে না কোনো ব্যবস্থা। এতে ভয়ানক কোনও রোগ ছড়ানোর মারাত্মক আশঙ্কা থাকে। আনিভা নিজেও এইডস আক্রান্ত। তার এইচআইভি-পজিটিভ ধরা পড়ার পরও যৌনকর্মের চর্চা চালিয়ে গেছেন তিনি। স্থানীয় ক্ষুব্ধ এক নারী বলেন, ‘তিনি এইচআইভি-পজিটিভে আক্রান্ত। আর তা কিশোরী মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।’

তবে আশার কথা হচ্ছে, মালাবির সরকার তাদের ক্ষতিকর এই প্রথার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। গত বছরের শেষের দিকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে আনিভাকে। মালাবির প্রেসিডেন্টের আদেশে গ্রেফতার করা হয় তাকে। যদিও তার মতো এমন আরও অনেক হায়েনা ছড়িয়ে আছে দেশটিতে। তাদেরও যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় অধিকার কর্মীরা।

এই প্রথার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন এমনই এক অধিকার কর্মী নাতাশা অ্যানি টনথলা। এ লক্ষ্যে ‘প্রোজেক্ট ডিগনিটি’ নামের একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। ১৩ বছর বয়সে প্রথম মাসিক হওয়ার পর নাতাশাকেও একজন হায়েনার সঙ্গে যৌনমিলন করতে হয়েছে। তিনি জানান, যৌনমিলনের সময় মেয়েদের চোখ বাঁধা থাকে। তাই কার সঙ্গে তাদের দৈহিক সম্পর্ক হলো, তা তারা জানতে পারে না।

নিজের সংগঠন সম্পর্কে এই নারী বলেন, ‘সবকিছু সত্ত্বেও আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। আমরা ভুক্তভোগী নারী এবং শিশুদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা সামাজিক এসব কু-প্রথার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দাঁড়াতে পারি।’

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর
বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

পাকিস্তানের নির্বাচনে জিতে যাচ্ছে ইমরান খান-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

একসঙ্গে মরতে এসে সরে গেলেন প্রেমিকা, ট্রেনে কেটে প্রেমিকের মৃত্যু

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

তোশাখানা কী, চাঞ্চল্যকর যে মামলায় স্ত্রীসহ ফেঁসে গেলেন ইমরান খান

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

জাপানে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫টি ভূমিকম্পের আঘাত

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও

ডালিম দিয়ে তৈরি আফগানিস্তানের পানীয় বিশ্বজুড়ে আলোচনায়, কিনছে আমেরিকাও