ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৈসাবির আনন্দে ভাসছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদ


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০১৬, ০৩:৫৮ পিএম আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ০৬:১২ এএম
বৈসাবির আনন্দে ভাসছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদ

বৈসাবির আনন্দে ভাসছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বৈসু সাংগ্রাই বিজু ও বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন সাজ সাজ রব। এ উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাতে নিয়েছে বর্ণিল কর্মসূচী।
 
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, মারমা উন্নয়ন সংসদ, ত্রিপুরা কল্যাণ সংস্থা, স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায় আলাদা আলাদা ভাবে তাদের ঐতিহ্য তুলে ধরতে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
 
বৈসাবি অনুষ্ঠানে বাহারি সাজে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেখা যাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের। ঘরে ঘরে আপ্যায়নের প্রস্ততি নিয়ে ব্যস্ত পাহাড়ি পল্লীবাসী। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ.খাগড়াছড়ি, আর্মি রিজিয়ন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সম্মিলিত ভাবে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া জেলার ৯টি উপজেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।

কিভাবে এলো বৈসাবি উৎসব: পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। বৈসাবি শব্দের কোন অর্থ নেই বাংলা কিংবা আদিবাসীদের ভাষার তালিকায়। ত্রিপুরা সম্প্রদায়রা চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসবকে বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই এবং চাকমারা বিজু নামে পালন করে। তিন উৎসবের আদ্যক্ষর বৈসু এর বৈ,সাংগ্রাই এর সা এবং বিজুর বি নিয়েই বৈসাবি।
 
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু: ত্রিপুরাদের বৈসুক সাধারণত সামাজিক উৎসব। ত্রিপুরারা বাংলা নববর্ষের শেষ দিনটিকে বৈসুমা বা বৈসুকমা, তার আগের দিনটিকে হারি বৈসু এবং নববষের্র ১ম দিনটিকে আতাডাক বলে। হরি বৈসুককের দিন তারা বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে ঘর সাজায়, গরু, মহিষ, ছাগলসহ গৃহপালিত পশুদের খুব ভোরে ঘর থেকে ছেড়ে দেয়। তরুণ-তরুণীরা নতুন জামা কাপড় পড়ে এই ঘর থেকে ঐ ঘরে ঘুরে বেড়ায়।


 
ত্রিপুরারা তাদের বৈসুমা দিনে তাদের বাড়িতে অতিথিদের মদ, পিঠা, অর্ধশতাধিক তরকারির পাচন দিয়ে আপ্যায়ন করে। ত্রিপুরা ছেলে-মেয়েরা নুনছড়ি দেবতা পুকুর বা নদী থেকে জল এনে তাদের নানা-নানী, দাদা-দাদীসহ স্থানীয় গুরুজনদের স্নান করিয়ে তাদের কাছে আর্শীবাদ নেন। বৈসু সময় ত্রিপুরা শিল্পীরা পাহাড়ী গ্রামগুলোতে ঐতিহ্যবাহী  গড়াইয়া নৃত্য পরিবেশন করে।
 
মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব: মারমাদের উৎসবের নাম সাংগ্রাই। সাংগ্রাই প্রথমদিনে মন্দির বা ক্যায়াং ঘর ভালভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় মেতে উঠে তারা। দায়ক-দায়িকারা টানা তিনদিন অবস্থান নিয়ে দীক্ষায় অভিভূত হয়ে বুদ্ধ মূর্তির সামনে ফুল রেখে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রণাম করেন। পল্লীবাসীরা ক্যায়াং ঘরে গুরু ভিক্ষু, শ্রমন, সাধুদের উদ্দেশ্যে ছোয়াইং প্রদান করে থাকেন। পরে চন্দন পানি, দুধ ও ডাবের পানি দিয়ে বুদ্ধ মূর্তিকে স্নান করানোর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় সাংগ্রাই এর নতুন বছর। ঐ দিন তরুণ-তরুণীরা জলবর্তী পাত্র দিয়ে দলে দলে এসে সাংগ্রাইতে মিলেমিশে জলকেলি বা পানীয় খেলাতে মেতে উঠে।

চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসব : পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজাতীয়দের তুলনায় চাকমারা খুব সচেতন ও প্রফুল্ল মনের জাতি। চাক্মারা ১ম দিনে (১২এপ্রিল) ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিনে (১৩ এপ্রিল) মূল বিজু এবং তৃতীয় দিন (১৪ এপ্রিল) গোজ্যেপোজ্যে উৎসব পালন করে থাকে। চাকমারা উৎসবের প্রথম দিনে ঘরবাড়ী ও আঙ্গিনা পরিস্কার করা ও ফুল দিয়ে সাজায়। পাহাড়ি ছড়া, ঝর্ণা বা নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে মা গঙ্গাকে পূজা করে পরিবার ও জাতির কল্যাণ কামনায় প্রার্থণা করেন। নদীতে  ফুল ভাসিয়ে বাড়িতে এসে চলে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি। ঘর দুয়ার সাজিয়ে গুছিয়ে চলে রান্না বান্না।

ত্রিপুরাদের মতো চাকমারাও পাঁচন রান্না করে। যেটিকে চাকমা ভাষায় চাকমা তুন বলা হয়। চাকমারা অতিথি অ্যাপায়নে বেশ আন্তরিক। পাঁচন, ফলমূল, মিষ্টি, খাবার দাবার ও কোমল পানীয় দিয়ে চাকমারা অতিথিদের অ্যাপায়ন করে। ফুল বিজুর পরের দিন অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন হচ্ছে মূল বিজু। ওইদিন নতুন জামা কাপড় পরে শিশুকিশোর, তরুণ তরুণীরা দল বেঁধে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায়। খাওয়া দাওয়া পাশাপাশি চলে আর্শীবাদ নেওয়ার ব্যাপারও। ছোটরা বড়দের প্রণাম করে। অনেকে প্রণামীও পেয়ে থাকেন। তৃতীয় দিন বাংলা নববর্ষের দিনও চাকমারা বিজু পালন করে। সেদিনও ঘরে ঘরে চলে অতিথি  অ্যাপায়ন ও ঘোরাঘুরি।
 
চাকমা গ্রাম বা আদাম গুলোতে বিজুর সময় নানা রকম খেলাধূলার আসর বসে। প্রত্যন্তাঞ্চলের গ্রামগুলোতে চলে রাতভর পালাগান ও গ্রাম্য নাটকের আসর। পাড়ায় পাড়ায় চলে হৈ হল্লোড় ও উৎসবের আমেজ।
 
পাহাড়ের বাংলা নববর্ষ: বাংলাদেশে তথা বিশাল বাংলার মতো পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও বৈসাবির পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় সার্বজনীনভাবে। পাহাড়ি -বাঙালীরা বৈসাবির মতো বাংলা বছরের পহেলা দিনকে নববর্ষ হিসাবে পালন করে। ওই দিন সকালে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের করা হয়। নববর্ষের দিন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি জনপদে পাহাড়ি বাঙ্গালীর মিলন মেলা বসে।

 

গো নিউজ২৪/জা আ

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর
‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

যাত্রাপালার ইতিহাস

যাত্রাপালার ইতিহাস