ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিঁপড়ারা তিন ভাই-বোন.... পিঁপড়া, টিপড়া আর শিপড়া


গো নিউজ২৪ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০১৬, ০৭:১৩ পিএম আপডেট: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ০৬:১২ এএম
পিঁপড়ারা তিন ভাই-বোন.... পিঁপড়া, টিপড়া আর শিপড়া

গোলাম মাওলা শাকিল: পিঁপড়ারা তিন ভাই-বোন.... পিঁপড়া, টিপড়া আর শিপড়া। বাবা-মা সহ যমুনা নদীর উওরপাশে এক বড় কাঁঠাল গাছের উপর তাদের সুখের সংসার। ভাইবোনগুলোর মধ্যে অসম্ভব মিল, এদের মাঝে ছোটবোন শিপড়া হইছে সবচেয়ে সুন্দর, লাল টুকটুকে গাঁয়ের রং। কিন্তু, তাদের সেই সুখের সংসারে  কাল হয়ে আসে এবারের বন্যায়। দিনে-দিনে পানি বাড়তেই থাকে। এক গভীর রাতে বাবা-পিঁপড়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে পিঁপড়ার...`খোকা, উঠ`, পানি যেভাবে বাড়তেছে, এখানে আর থাকা চলে না...। পিঁপড়া উঠে বলে...`বাবা, তোমরা সবাই একটা বড় পাতায় বসে পড়ো, আমি গোড়াই কেটে দিচ্ছি। পিঁপড়া, কাঁটে কুটুস....সবাই পানিতে পড়ে যায়......বাবা পিঁপড়া বলে, খোকা, লাফ দে, লাফ দে.....পিঁপড়া লাফ দেয়, ভাগ্যিস সেই পাতার মাঝেই পড়ে। উত্তাল যমুনার ঢেউয়ে তারা দুলতে থাকে, শুধু মা পিঁপড়ার আফসোস, আহারে কি সংসার ছিল.....। একেকবার ঢেউয়ে যখন পাতা ঢুলে উঠে, পিঁপড়া ভাই-বোন দুটোকে বুকে জড়িয়ে ধরে। এতো ভয়ের মাঝেও শিপড়া বলে....ভাইয়া, কি ঢেউ দেখছো, আমরা কি ডুবে যাবো ? পিঁপড়া অভয় দেয়...ধূর পাগলি, জীবনতো এরকমই, ঢেউ আসবে যাবে.....। শিপড়া আবার বলে....জীবনের সব ঢেউয়ে কি আমরা এইরকম একসাথে থাকবো? কেনো নয়, আদুরে বোনকে বুকে টেনে নিয়ে পিঁপড়া বলে...... তুই এখন ঘুমা......। দুলতে দুলতে তারা সকালে যমুনার দক্ষিণে এক মস্ত বড় বাড়ীর কোনায় আশ্রয় নেয়। সবার ক্ষিধাও লাগছে, পিঁপড়া যায় একটু খাবার খুজতে। সে বাড়ীর রান্নাঘরে গৃহকর্ত্রী চা বানাচ্ছে, পিঁপড়া চিনি সহ চামচে উঠে যাই। মহিলা চায়ের কাঁপে চামচ দিয়ে পিঁপড়া কে দেখে, বিরক্ত হয়ে ফেলে দেয়। অনেক কষ্টে তিনটা চিনির দানাসহ পিঁপড়া অস্থায়ী ঘরে ফিরে। পোড়া শরীর দেখে বাবা-মা পিঁপড়া আঁতকে উঠে, শরীরে পানি দিতে থাকে আর বিলাপ করতে থাকে...কই গেছলিরে খোকা ? দুপুরে সে বাড়ীতে আবার চা খাওয়ার রেওয়াজ আছে, এবার বের হয় বাবা-মা পিঁপড়া, আর টিপড়া ও শিপড়া...।  চিনির ঢিব্বা খুলতেই টিপড়া আর শিপড়া, ভিতরে ঢুকে যায়, আর বাবা-মা পিঁপড়া কিছু চিনি নিয়ে ঘরে ফিরে। ঘরে ফিরার পর মনে হয়, ছেলে-মেয়ে দুটো বুঝি ঢিব্বার ভিতর আটকে পড়ছে, চিন্তা করতে থাকে তাদের জন্যে..। ঘরে ফিরে অনেকক্ষণ পর তারা খাইতে বসে। আর, ঢিব্বার ভিতর এতো চিনির মাঝে টিপড়া, আর শিপড়া গান গায়- `চিনি আমার চিনি, সত্যিই এত্তো চিনি..........।` বিকাল হয়, পিঁপড়া বলে- চলো বাবা, এখন নিশ্চই তারা চা বানাবে; এই সুযোগে টিপড়া আর শিপড়া কে নিয়ে আসতে হবে....।` মা পিঁপড়া আপত্তি করে, এই শরীরে তোকে যেতে হবে না...। তবুও, পিঁপড়া যায়, বিকেলে সেইবাড়ীর গৃহকর্ত্রী চা বানানোর জন্যে আবার চিনির ঢিব্বা খুললে তিনজন মিলেই তার পায়ে কামড় দেয়। মহিলা পা হাত দিয়ে ঝাড়া দিতেই চিনির ঢিব্বা মাটিতে পরে যায়। বাবা-মা, অনেক চিনি, টিপড়া আর শিপড়াকে নিয়ে চলে আসে। পড়ে যাওয়া চিনি দিয়ে মানুষ কি করবে, সেই মহিলা চিনিগুলোও ফেলে দেয়? আস্তে, আস্তে বাবা- পিঁপড়া ঘরে অনেক চিনি মজুদ করে। হঠাৎ তার মনে হয় বড় খোকার কথা, সে কোথায়?  তিনি আবার সেই বাড়ীর রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তার সন্তানের মৃতদেহ পড়ে আছে। সেই মহিলার হাতের চাপে সে আর বাঁচতে পারে নাই।
দিন যায়......পিঁপড়া পরিবারে আর খাবারের অভাব নাই, নতুন জায়গায় ভালোই সংসার গুছিয়েন মা-পিঁপড়া....। কিন্তু, টিপড়া আর শিপড়ার সেই আগের হই-হুল্লোর নাই, মা গভীর রাতে কখনো ডুকরিয়ে উঠেন.....`ওরে আমার বড়খোকা রে....` বলে। বাবা-পিঁপড়া নীরব হয়ে গেছেন, কথা-বার্তা তেমন বলেন না। চিৎকার করে কাঁদার চেয়ে, নীরবে কাঁদা খুব কঠিন তিনি সেই কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত...............।

উৎসর্গ- পৃথিবীর সংসারের সমস্ত বড় সন্তানদেরকে......।

লেখক, শিক্ষার্থী, ঢাবি....

গো নিউজ/ এটি

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর
‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

যাত্রাপালার ইতিহাস

যাত্রাপালার ইতিহাস