ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধানে পোকার আক্রমণ, কৃষকের মাথায় হাত


গো নিউজ২৪ | শরিফুল ইসলাম, নড়াইল প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৭, ১২:১৭ পিএম
ধানে পোকার আক্রমণ, কৃষকের মাথায় হাত

আর কিছুদিন পরই ধান কেটে যেখানে ঘরে তুলতে হবে চলছে সে প্রস্তুতি। কিন্তু এমন সময় রোপা আমন ধানে গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে ধানের গাছ। জমির ধান গাছের বিবর্ণ চেহারা দেখে কৃষকের চেহারাও বিবর্ণ হয়ে গেছে। শেষ সময়ে ফসলের ক্ষেত্রে পোকার আক্রমণে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে।

জানা গেছে, হঠাৎ করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাজারের ওষুধে এই পোকা দমন করতে পারছে না। আবার হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় কীটনাশকের সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পোকা দমনে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের আশংকা, পোকা দমন করতে না পারলে রোপা বোরো ও আমন উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫৫, লোহাগড়া উপজেলায় ৯ হাজার ৭৮০ এবং কালিয়া উপজেলায় ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লোহাগড়া ও সদর উপজেলায় ৮ দশমিক ৬৪ একর জমির ধান এই পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়েছে।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ করেছে। কিন্তু কৃষকরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বহুগুন বেশী। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া ও সদর উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক শত কৃষকের অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিনই এই পোকার আক্রমণ বিভিন্ন এলাকার বিলে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা।

কৃষকদের অভিযোগ- জমির ধান নষ্ট হয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ কোন সাহায্য করছে না। এমনকি কোন পরামর্শও দিতে আসেনি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের পঁচাশিপাড়ার কৃষক মোজাফফর হোসেন, ওসমান শেখ ও শাহাদৎ শেখ বলেন, গত তিন-চার দিন ধরে এই এলাকার ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত বাদামি রঙ ধারণ করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ক্ষেতের পোকা দমনে যে কীটনাশক ব্যবহার করতে বলছেন, তা চাহিদার তুলনায় বাজারে কম পাওয়া যাচ্ছে।

জয়পুর গ্রামের কৃষক জামাল ফকির ও পরেশ মল্লিক, সিংগার হুমায়ুন কবির, ইদ্রিস শেখ, চরকালনার মুন মীর, লাবলু মীর, মোচড়ার কামাল মোল্যা, পাঁচুড়িয়ার সোহেল লস্কর বলেন, বাদামি গাছফড়িং (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকা রোপা বোরো ও আমন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে। ধান গাছে কাইচ থোড় আসার পর পোকার আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। পোকার ডিম থেকে বেরিয়ে আসা বাদামি ফড়িংয়ের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক উভয় পোকা দলবদ্ধভাবে ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খেয়ে ফেলছে। আর এ কারণে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণে ধান গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রঙ ধারণ করছে।

সদর উপজেলার সীবানন্দপুর গ্রামের কৃষক ইশারত শেক বলেন, হঠাৎ করে ধানে পোকার আক্রমণে আমাদের ফসল উৎপাদন কমে যাবে এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

লোহাগড়া বাজারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, প্রতিদিনই শত শত কৃষক কারেন্ট পোকা দমনের জন্য কীটনাশক কিনতে আসছেন। কিন্তু বাজারে কীটনাশকের সরবরাহ কম। ফলে কীটনাশক না পেয়ে অনেক কৃষকই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

লোহাগড়া উপজলো কৃষি র্কমর্কতা সমরেন বিশ্বাস জানান, এই পোকার নাম বাদামি গাছফড়িং (বিপিএইচ)। স্থানীয়ভাবে এই পোকাকে কৃষকরা ‘কারেন্ট পোকা’ বলছেন। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এরই মধ্যে এ সম্পর্কিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। এই পোকা দমনে ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ তৈরির জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনে তৎপর রয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, জেলায় এবছর জেলায় রোপা আমনের লক্ষা মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ৮’শত ৯৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২’শত ৮৫ হেক্টর জমিতে।

তিনি পোকার আক্রমনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সদর ও লোহাগড়ায় সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ হয়। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। এতে উৎপাদনের কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।

গোনিউজ২৪/কেআর

 

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর
৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

৫ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বেসিক ব্যাংক কি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

বাজারে এখন টাকা ও ডলার উভয় মুদ্রার সংকট, অদল-বদল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

ইসলামী ব্যাংকসহ ৮টি ব্যাংকের কারণে ঘাটতিতে পুরো ব্যাংক খাত

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিয়ে বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জনপ্রতি ৫০ টাকা আয়করের প্রস্তাব

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা

ব্যাংক পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী মাসে ৫০ হাজার টাকা