ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কী করবেন এখন প্রধান বিচারপতি?


গো নিউজ২৪ | পাপলু রহমান, নিউজরুম এডিটর প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৭, ০১:২৫ এএম
কী করবেন এখন প্রধান বিচারপতি?

ঢাকা: সরকারের বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। প্রধান বিচারপতির কিছু বক্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশসহ আলটিমেটাম দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে তারা জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকছেন। সরকার ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনায় মাঠ গরম করে তুলছেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। কিন্তু সেই সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সামরিক শাসনের সময় সংবিধানে আসা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরিয়ে আনার রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় ক্ষমতাসীনরা। চলতি অগাস্ট মাসের শুরুতে এ সংক্রান্ত রায় প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ তুলে একদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে একই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করছে বিএনপি।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সমঝোতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে এর মধ্যেই গত ২০ আগস্ট বিচারিক আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে আপিল শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) বলেন, ‘পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য করেছেন। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরো পরিপক্কতা দরকার।’

প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্য সরকারকে চরম ক্ষুব্ধ করে তোলে। পরদিন জাতীয় শোক দিবসের (২১ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এক নয়। যে পাকিস্তানকে আমরা হারিয়েছি তার সাথে আমাকে তুলনা করা হয়েছে। সব সহ্য করতে পারি কিন্তু পাকিস্তানের সাথে তুলনা সহ্য করব না। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পাকিস্তানের ভয় আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই। ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশ স্বাধীন বলেই আজ ওই চেয়ারে বসতে পেরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, সংসদ সদস্যদের নিয়ে মন্তব্য করা উচ্চ আদালতের কাজ নয়। সংসদ নিয়ে প্রধান বিচারপতি কথা বলতে পারেন না। ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সরে যাওয়া উচিত ছিল। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বহু অবাঞ্ছিত কথা বলা হয়েছে।

খোদ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরদিন ২২ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনি দয়া করে পদত্যাগ করুন। দেশের জনগণ অনেক ধৈর্য ধরেছে। দেশের জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য ধৈর্য ধরবে না।

ঠিক একই সময়ে (২২ আগস্ট দুপুরে) সুপ্রিমকোর্ট বারের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতারা।

সংগঠনের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে ওই প্রতিবাদ সভায় প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেয়া পর্যবেক্ষণ ও রায় প্রত্যাহার করে পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে এক দফা আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। এসময় পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেন নেতারা।

সূত্রমতে, সরকার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে রায় ও পর্যবেক্ষণে উঠে আসা আদালতের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছে। এক পর্যায়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকও করা হয়। নানামুখী চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি নিজ অবস্থান বদলাতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছিল।

তবে সেসব বৈঠক ও চাপে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় বিকল্প হিসেবে পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের দিকে মনোযোগ দেয় সরকার ও সরকার দলীয় নেতারা। তবে গেল ২০ আগস্ট আদালতে শুনানিকালে ‘পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে।... আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি..’ প্রধান বিচারপতির এমন মন্তব্য সবকিছু উলটপালট করে দেয়। এমন বক্তব্যে উল্টো সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা।

এর মধ্যেই আবার প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।

গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা ওই সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেশের পরিস্থিতিকে আরও নৈরাজ্য করে তুলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’ অপছন্দের রায়ের কারণে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

যদিও বিএনপির ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকার আগেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রধান বিচারপতিকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নীরবে শ্রুবণ করায় অ্যাটর্নি জেনারেলেরও পদত্যাগ দাবি করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বত্র শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এখন একটাই প্রশ্ন কী ঘটতে যাচ্ছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ভাগ্যে? কী করবেন প্রধান বিচারপতি?

গোনিউজ২৪/এন

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর
জামিন পেলেন মামুনুল হক

জামিন পেলেন মামুনুল হক

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেলেন ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী  ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না’

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হাইকোর্ট

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড

ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ বিএনপি নেতার চার বছরের কারাদণ্ড