ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আত্মহত্যার নৃশংস বাজি ‘নীল তিমি গেম’!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ১০:০০ এএম
আত্মহত্যার নৃশংস বাজি ‘নীল তিমি গেম’!

অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের গেম রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বেশ কয়েকটি। ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান, লীগ অফ লেজেন্ডস কিংবা মিনি মিলিশিয়া- সেগুলোর অন্যতম। এ যুগের তরুণ-তরুণীরা যেন সারাক্ষণ মুখ বুজে পড়ে থাকে এসব গেমে। অবশ্য বড়দের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়। যদিও তরুণ-তরুণীরাই সবার থেকে এগিয়ে।

কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, গেম পাগল এসব তরুণ-তরুণী (পাগলাটে?) বুঝতেই পারছে না- এসবের মধ্যে এমন এক ভয়ঙ্কর গেম রয়েছে, যা এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩০ তরুণ-তরুণীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে?

হাতে আঁকা ব্লু  হোয়েল

না, আমি কোনো সিনেমার গল্প বলছি না। বাস্তবেই এমন এক গেমের সন্ধান পাওয়া গেছে যার শেষ ধাপ হচ্ছে আত্মহত্যা। নৃশংস সেই অনলাইন গেমই হলো ‘ব্লু  হোয়েল’ বা ‘নীল তিমি’। এটা খেলতে গিয়েই আত্মহত্যা করেছে শতাধিক তরুণ-তরুণী।

জানতে ইচ্ছে করছে, কী রয়েছে ভয়ঙ্কর এই গেমটিতে? যাতে আসক্ত হয়ে আত্মহত্যার দিকে ধেয়ে যাচ্ছে এতো তরুণ-তরুণী?

মূলত, ‘ব্লু  হোয়েল’ গেমটির কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে। সোশ্যাল গেমিং পেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নির্দেশ মোতাবেক এতে ৫০ দিন ধরে বিভিন্ন টাস্ক পূরণ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে নিজেকে আহত করা। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে হরর মুভি দেখা... ইত্যাদি।

শুরুর দিকের টাস্কগুলো বেশ সহজ। অন্যান্য গেমের চেয়ে ভিন্ন রকম মজা পেয়ে যায় প্লেয়াররা। এর মধ্যে ছিল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের পাঠানো ভিডিও ও ছবি দেখা। ভোর ৪.২০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে ক্রেইনে চড়া... ইত্যাদি। তবে প্লেয়ার যত উপরের লেভেলে পৌঁছায়, টাস্কও তত কঠিন হয়। ফাইনাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্লেয়ারকে আত্মহত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়।

‘ব্লু  হোয়েল’ কথাটিও কিন্তু এসেছে সমুদ্র তীরবর্তী নীল তিমি থেকে। যাকে আত্মহত্যার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আত্মঘাতী এই গেম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের দেশে দেশে। চলে এসেছে আমাদের এশিয়ার দেশগুলোতেও।

চলতি বছরের ২৬ জুলাই ভারতের তিরুবনন্তপুরমের ভিলাপিলাশালা এলাকায় বাড়ি থেকে ১৬ বছরের এক কিশোরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এটা আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করেছিল পুলিশ। তবে সম্প্রতি ওই কিশোরের মা দাবি করছেন, গেল বছরের নভেম্বরে ‘ব্লু হোয়েল’ চ্যালেঞ্জার গেম ডাউনলোড করেছিল সে। এরপর বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ব্লু হোয়েলের নেশায় পড়েই আত্মঘাতী হয়েছিল কিশোরটি।

কিশোরের মায়ের ভাষ্য, ‘ছেলে বলেছিল, এই গেমের শেষ পর্যায়ে হয় আত্মহত্যা করতে হবে অথবা কাউকে খুন করতে হবে। এটা শোনার পরই আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ওকে গেমটা খেলতে বারণ করেছিলাম।’ মৃত কিশোর মা এটাও জানিয়েছিলেন, ওই ঘটনার আগে একবার কম্পাস দিয়ে নিজেকে আহত করেছিল তার কিশোর ছেলেটি।

অনলাইনের একটা গেমের কারণে বিপুল সংখ্যক তরতাজা প্রাণ ঝরে পড়ার রহস্যের পেছনে কার হাত রয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আদাজল খেয়ে নামে কর্তৃপক্ষ। এরপর সন্ধান পাওয়া যায় ফিলিপ বুদেকিন নামের রাশিয়ান এক ব্যক্তির। যিনি সাইকোলজির প্রাক্তন ছাত্র। যাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার অসুস্থ ক্রেইজের সঙ্গে জড়িত ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটির উদ্ভাবক এই ফিলিপ বুদেকিন।

রাশিয়ান এই গেম ডেভেলপার তার ভিক্টিমদের ‘বায়োলজিকেল ওয়েস্ট’ বলে দাবি করেন। তিনি সমাজকে আবর্জনামুক্ত করছেন বলে জানান। রাশিয়ার তরুণীদের তিনি নিজের প্রেমের জালে এমনভাবে ফাঁসিয়েছেন যে, আত্মহত্যার আগে তরুণীরা বুদেকিনের ঠিকানায় পাঠানো সুইসাইড লেটারে লিখে যায় ‘Happy to die’।

ফিলিপ বুদেকিন এবং তরুণীরা 

সাইক্রিয়াটিস্টরা নৃশংস আত্মঘাতী ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের উদ্ভাবক ফিলিপ বুদেকিনকে বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তার করার পর অনেক অভিভাবক স্বস্তি পেয়েছেন। তবে তারা হয়তো ভুলেই গেছেন শুধু পেইজের অ্যাডমিনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গেম কিন্ত এখনো অনলাইনে রয়েই গেছে।

ফিলিপ বুদেকিন - ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটির উদ্ভাবক

তাই, অভিভাবকদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে লাভ নেই। তাদের হতে হবে আরো বেশি সচেতন। নিজের সন্তানের দিকে, ছোট ছোট ভাই-বোনদের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা যেন কোনো ফাঁকে ভয়ঙ্কর সেই গেমের ফাঁদে না পড়ে।

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ