শরীয়তপুরে এক ছাত্রলীগ নেতা ছয় নারীকে ধর্ষণের পর ভিডিও বিভিন্ন লোকের মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের পর ছাত্রলীগের ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতার আতঙ্কে ছাত্রলীগের ওই নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্ত মো. আরিফ হোসেন হাওলাদার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম জানান, সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগ নেতা মো. আরিফ হোসেন হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগ ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন হাওলাদার গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা রেখে স্থানীয় এক নারীর ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। গোপন ক্যামেরায় ধর্ষণেরও ভিডিও করে। ওই ভিডিও এখন মোবাইলের মাধ্যমে মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এ ঘটনার পর আরিফ পলাতক রয়েছে।
একইভাবে ছয়জন নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
১৫ অক্টোবর থেকে এ সকল ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে আরিফ। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী নারীরা মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এক নারীকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এরমধ্যে আরিফ তার চাচাত বোন এবং এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয় অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে সে অনেক নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে এ সকল অশ্লীল ভিডিও দেখে মানুষের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার বলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে তার বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। কলেজ ছাত্রী চাচাত বোনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে সে দাবি করেছে।
আরিফ আরো জানান, কিছুদিন আগে তার মোবাইলটি চুরি হয়ে যায়। এরপর তার ফেইসবুকের ইমুতে ফোন দিয়ে এক নারী ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
এরপর আরিফ ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর কদিন পরেই কে বা কারা আমাকে রাজনীতি থেকে সরানোর জন্য এসব ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে। আরিফ দাবি করেন এইসব ছবি প্রকাশ করার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। ক্ষতিগ্রস্ত কলেজছাত্রী পর্দার আড়াল থেকে জানিয়েছে আরিফ তার জীবনটা ধবংস করে দিয়েছে। এখন সে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ভুক্তভোগী আরেক নারীর বোন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে আরিফ হোসেন আমার বোনের কাছ থেকে কয়েক দফা টাকা নিয়েছে। একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। সে এখন লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াসিম তালুকদার বলেন, নারীদের সঙ্গে নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন হাওলাদারের অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, আরিফ হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে নারীদের অশ্লীল ভিডিও বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে এমন খবর পেয়ে তার বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি। আমার কাছে ভিডিওর কোনো ডকুমেন্ট নেই।
গোনিউজ২৪/কেআর