মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব নেতারা। মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের ফলে রক্তপাত ও সহিংসতা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছেন অনেকে।
হোয়াইট হাউসে বুধবার এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিতর্কিত জেরুসালেম শহরকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ফলে এই প্রথম কোনো দেশ জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিল।
ট্রাম্প আরো ঘোষণা দিয়েছেন, মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের মানে এই নয় যে আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে।
তিনি বলেছেন দীর্ঘদিনের ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সংঘাতের অবসান ঘটাতে আমেরিকা দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত যদি উভয় পক্ষ সেটাই চায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন ট্রাম্প শুধু এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন যে জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে বেশি কার্যকর। যদিও ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে তাদেরও রাজধানী হিসাবে দাবি করে।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়া বলেছেন, এটা দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, জেরুজালেম ফিলিস্তিনের চিরস্থায়ী রাজধানী।
ফিলিস্তিনের ইসলামিক সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, আমাদের ফিলিস্তিনি লোকজন এই ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না।
ইসরায়েল
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা ‘ঐহিতাসি’। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান।
নেতানিয়াহু আরো বলেন, গত ৭০ বছর ধরেই জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত।
মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসেগ্লু বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। টুইটার বার্তায় তিনি এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ রেজুলেশনের বিরোধী বলেও মন্তব্য করেন।
সৌদি আরব এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছে, ‘এটা অন্যায় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন’।
আরব লীগ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক বলে অভিহিত করে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ইরান বলেছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্রোহ বা ইন্তিফাদা তৈরি করতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাম্প স্পষ্টত আন্তর্জাতিক রিজুলেশন ভঙ্গ করেছেন।
জর্দানের রাজা আবদুল্লাহ এই সিদ্ধান্তের প্রভাব মোকাবেলায় যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা হোক।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যারা শান্তি চান ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়য়ের প্রতিক্রিয়া
পোপ ফ্রান্সিস মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের রেজুলেশন মান্য করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতারেস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিবৃতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তি প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি যেকোনো মূল্যে সংঘাত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
চীন ও রাশিয়া উভয় দেশই বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থণ না করে বলেছেন, সে অঞ্চলে শান্তি আনয়নের পথে এটি কোনো উপকারী পদক্ষেপ হবে না।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বার্লিন এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না।- বিবিসি।
গোনিউজ২৪/কেআর