ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভেতর থেকে লেখার তাড়া দেয়: রণজিৎ সরকার


গো নিউজ২৪ | গোনিউজ ডেস্ক, প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ০১:৫৪ পিএম আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ১০:৩৮ এএম
আমার ভেতর থেকে লেখার তাড়া দেয়: রণজিৎ সরকার

ছবি: রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার এ সময়ের তরুণ কথাসাহিত্যিক।  একই সঙ্গে লিখছেন শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প, উপন্যাস।  তিনি সাহিত্যে পদচারণা করছেন একযুগের বেশি সময় ধরে।  তার এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইযের সংখ্যা ৩২টি।  উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে- ভাষাশহীদের গল্প, বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা, ক্যাম্পাস প্রিয়তমা, নায়িকার প্রেমে পড়েছি, প্রেমহীন ক্যাম্পাস, স্কুল ছুটির পর, ক্লাসরুমে যত কাণ্ড।  

তার জন্ম ১২ মে, ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সরাইদহ গ্রামে।  বর্তমানে তিনি একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকে সম্পাদকীয় বিভাগে কর্মরত আছেন।

প্রশ্ন: লেখালেখি শুরু করলেন কীভাবে?

রণজিৎ সরকার: ছোটবেলায় আমার একটা অভ্যাস গড়ে উঠে।  অভ্যাসটা হলো নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখা।  স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ভুয়াইগাঁতী বাজারের সেলুনে ঢুকতাম।  নিজের চেহারাটা দেখার জন্য।  বিশেষ করে সুরেশ কাকার সেলুনে।  কারণ সুরেশ কাকা সেলুনে চুল কাটাতাম।  কাকা দোকানে পত্রিকা রাখতেন।  প্রথম প্রথম পত্রিকার হাতে নিয়ে সাহিত্য আর বিনোদন পাতা চোখ বুলাতাম।  সাহিত্য ও বিনোদন দেখে কখনো কখনো শিরোনামগুলো পড়ে রেখে দিতাম।  ধীরে ধীরে পত্রিকা পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে লাগলাম।  তারপর দেখি পত্রিকায় অনেক মানুষের নাম ছাপা হয়। মনে মনে খুব ইচ্ছা হলো আমার নামটা পত্রিকায় ছাপা অক্ষরে দেখার।  কিন্তু কীভাবে, কী লিখবে, কোথায় পাঠাব? কোনো কিছুই জানি না।  একদিন দেখি লেখা আহ্বান করেছে।  গল্প, কবিতা, ছড়ার।  আমি একটা কবিতা লিখে পাঠিয়ে দিলাম।  দেখি পরের সপ্তাহে ছাপা হয়েছে।  আমি তো মহাখুশি। পত্রিকাটা নিয়ে বন্ধুদের দেখাতে লাগলাম।  বন্ধুরা আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতে শুরু করল।  আমার বন্ধু শ্যালম ওর সঙ্গে লেখালেখির বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম।  শ্যালন বলল, ‘তোকে লেখক বানিয়ে ছাড়ব আমি।  তোর লেখা কবিতাগুলো কম্পোজসহ প্রিন্ট করে আমাদের বাজারের প্রতিটি দোকানে লাগাব।  স্কুলের ওয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায়।’  আমি রাজি হয়ে গেলাম।  শ্যামলকে কয়েকটা কবিতা দিলাম ও উল্লাপাড়া থেকে কবিতাগুলো কম্পোজ করে নিয়ে এল।  বিকেলে আমরা বাজারের বিভিন্ন দোকানে লাগাতে লাগলাম।  এর মধ্যে এলাকার কিছু লোক দেয়ালে আমার লাগানোর কবিতাপত্র ছিঁড়ে ফেল দিল।  আমার খুব কষ্ট লাগল।  মনে হলো আমার কলিজা টানতে দিয়ে ছিঁড়ে বের করে নিয়েছে।  আমার বন্ধুরা মিলে চিন্তা করলাম।  ওদের ঠাঙবো।  কিন্তু না।  তা হলো না।  শ্যামল বলল, ‘এর জবাব কিন্তু তোকে লেখক হয়ে দিতে হবে।  তোর পাশে আমি আছি। ‘ তারপর ধীরে ধীরে লিখতে লাগলাম।  জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে লেখা পাঠাতে লাগল।  লেখা ছাপা হতে লাগল।  আত্মবিশ্বাস বাড়তে লাগল। 

প্রশ্ন: আপনার প্রথম লেখার অনুভূতি সম্পর্কে বলুন। 

রণজিৎ সরকার : আমার প্রথম লেখাটা ছিল কবিতা।  কবিতাটা ছিল মাকে নিয়ে লেখা।  কবিতার নাম ছিল ‘মা’।  আমি একদিন পড়তে বসে মাকে কাছে ডাক দিলাম।  মা আমার কাছে এলো।  মাকে বললাম, ‘তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি।  তুমি শুনবে ‘ মা রাজি হয়ে গেলেন।  আমি কবিতাটা পড়ে শুনালাম।  কবিতাটা পড়া শেষ হলে মায়ের চোখের জল টপটপ করে পড়তে লাগল।  আমিও কেঁদে ফেললাম।  মা আমরা মাথা হাত রাখলেন।  আবেগে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।  ওই কবিতাটাই পত্রিকায় পাঠালাম, কয়েকদিন পর ছাপা হলো।  এইটা আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা। 

প্রশ্ন: আপনার প্রথম বই কত সালে প্রকাশিত হয়?

রণজিৎ সরকার : আমার প্রথম বই বের হয় ২০১২ সালের বইমেলাতে।  সে বছর আমার দুটি বইবের হয়।  একটি বের হয় শুভ্রপ্রকাশ থেকে। বইটির নাম ‘স্কুল ছুটির পর’ অন্যটি বের হয় আফতাব বুক হাউজ থেকে বইটির নাম ‘ভূতের ফাঁসি’।  বই দুটি ওই মেলাতেই দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়।  যা একজন তরুণ লেখক হিসেবে প্রথম বছরেই বিশাল অর্জন বলা যেতে পারে।  তারপর থেকে এগিয়ে চলার পথে আছি...।
 
প্রশ্ন: তাহলে আপনার সেই অর্জনের কারণেই প্রতিবছর নিয়মিত বই বের হচ্ছে?

রণজিৎ সরকার : ‘হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। ২০১২ সালের বইমেলাতে আমার দুটি বই ছিল গল্পের। ২০১৩ সালে আবার বের হলো চারটি বই। একটা কিশোর উপন্যাস আর তিনটি গল্পের বই। ২০১৪ সালে এসে আমার ছয়টা বই বের হলো। দুইটি কিশোর উপন্যাস আর চার টি গল্পের বই। ২০১৫ সালে এবার বের হলো আটটি বই। একটা বড়দের গল্পের বই ‘প্রেমহীন ক্যাস্পাস’ আর দুইটি কিশোর উপন্যাস। বাদ বাকিগুলো গল্পের বই।’
 
প্রশ্ন: এবার বইমেলাতে আপনার কয়টি বই বের হয়েছে?

রণজিৎ সরকার: এবার বইমেলাতে বের হয়েছে পাঁচটি। শব্দশৈলী থেকে এসেছে  শিশু-কিশোদের জন্য ‘গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা’। আর রূপপ্রকাশ এসেছে কিশোর উপন্যাস ‘ফার্স্ট গার্লের সেলফি কাণ্ড’ ও রোমান্টিক ‘ক্যাম্পাসের প্রিয়তমা। শিশুরাজ্য থেকে আসছে শিশু-কিশোরদের জন্য গল্পের বই ‘সুস্মিতা নিয়মিত স্কুলে যায়’ এবং বাবুইপ্রকাশ থেকে আসছে শিশু-কিশোরদের জন্য গল্পের বই পরীর সাথে দেশ ঘুরি।  এখন আমার মোটা বইয়ের সংখ্যা ৩২টি।

প্রশ্ন: এবার তো আপনার পাঁচটি বই এসেছে।  এর মধ্যে আপনার মতে ভালো বই কোনটি?

রণজিৎ সরকার : আমার কাছে পাঁচটিই সেরা।  প্রতিটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলাদা।  তবে এর মধ্যে গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা বই আমার কাছে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।  কারণ বাংলাদেশে আমার জানা মতে, শিশু-কিশোরদের উপযোগী চার নেতার ওপর গল্প লেখা হয়নি।  আমি হয়তো প্রথম লিখেছি।  আমার কাছে এ বইটির গুরুত্ব অন্যরকম।  বই দুটি প্রকাশ করছে শব্দশৈলী

প্রশ্ন: আপনার এই বয়সে অনেকগুলো বই বের হয়েছে।  অনেকে জনপ্রিয়ও বটে।  এত সময় আপনি কি করে বের করেন?

রণজিৎ সরকার: আমি নিয়ম করে প্রতিদিন লিখি।  প্রতিদিন কিছু না কিছু না লিখে থাকতে পারি না।  লেখালেখিটা আমার মজ্জাগত।  আমার ভেতরে সব সময় লেখালেখির ভাঙা গড়ার ভাবনার কাজ করে।  লেখালেখির ভাবনা ছাড়া আমি অন্য কোন কিছু অতি সহজে ভাবতে পারি না।  যেমন-বিশ্ববিখ্যাত লেখক গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছেন, ‘লেখকের ২৪ ঘণ্টার চাকরি হলো, লেখালেখি করা।’ আমি লেখার কোনো বিষয় পেলে, বিষয়টা নিয়ে ভাবতে থাকি লিখব কী লিখব না।  যদি দেখি আমি লিখতে পারব, তাহলে ভাবতে থাকি, কীভাবে শুরু করব।  চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ঠ্য, সংলাপ নিয়ে ভাবি, বিভিন্নভাবে তারপর লেখা শুরু করি। 
আর আমি জনপ্রিয় কী না, তা জানি না।  আমার ভেতর থেকে লেখার তাড়া দেয়, তাই আমি লিখি।  আমার দায়িত্ব লেখা, আমি লিখি।  বাকিটা সময় বলে দেবে।

প্রশ্ন: আপনি ছোটদের জন্য লিখতে ভালোবাসেন না, বড়দের জন্য?

রণজিৎ সরকার : আমি লিখি পাঠকদের জন্য।  পাঠক যে ছোট-বড় হয় তা তো কখনো ভাবিনি।  আপনার কথায় তো ভাবনায় পড়ে গেলাম।  তবে হ্যাঁ, যে পাঠক আজ শিশু আগামীতে পিতা।  তাই আমি শিশু ও পিতার জন্য সব শ্রেণির লেখা লিখতে চাই।  আমি চাই এক পাঠকের সারা জীবন।

প্রশ্ন: লেখালেখির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

রণজিৎ সরকার : লেখালেখি নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ নেই।  আমার জীবনের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।  লেখালেখি করতে ভালো লাগে তাই লিখি।  লেখালেখির বাইরে অন্য কোনো কাজ আমি জানি বলে মনে পড়ে না।  স্কুলজীবনে পরীক্ষার খাতায় জীবনের লক্ষ্য রচনাতে লিখেছিলাম ‘আমি লেখক হব।’ সে কথা মনে পড়লে আমার এখন নিজের হাসি পায়।  মাঝে মাঝে ভাবি ছেলেবেলায় এত বড় দুঃসাহস ছিল আমার।  এখন তো এ কথা ভেবে ভয় পাই।  কারণ আমি এখন হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি লেখক হওয়া কতো বড় কঠিন কাজ।

গোনিউজ২৪/এম

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর
‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

‘ছি ছি ছি ছি’ দুয়োধ্বনি দিয়ে বইমেলা থেকে বিতাড়িত মুশতাক-তিশা!

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

৭৬ বছরে এসে কবি হেলাল হাফিজ বললেন, ‘একা থাকার সিদ্ধান্ত ছিলো ভুল’

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বইমেলায় এসেছে ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবিরের বিচিত্র কয়েদখানা

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতুল কৃষ্ণ হালদার এর দুটি বই এবারের বই মেলায়

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

এবার একুশে পদক পাচ্ছেন যারা

যাত্রাপালার ইতিহাস

যাত্রাপালার ইতিহাস